সম্পদ বৃদ্ধিতে উপজেলা পরিষদে আগের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা পেছনে ফেলেছেন সংসদ সদস্যদের। যেখানে সংসদ সদস্যদের সম্পদ বৃদ্ধির হার ছিল সর্বোচ্চ ৩০৬৫ শতাংশ, সেখানে একজন চেয়ারম্যানের সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে ৪২০০ শতাংশের বেশি। এবারের নির্বাচনে প্রথম ধাপে ৭ শতাংশ প্রার্থী কোটিপতি।
গতকাল সোমবার ধানমণ্ডি মাইডাস সেন্টারে উপজেলা নির্বাচনে (প্রথম ধাপ) প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ ও ফলাফল নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
টিআইবি বলছে, প্রথম ধাপের ১৫২টি উপজেলার মধ্যে ১৪৪টির প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রায় চার হাজার ৮০০টি হলফনামার আট ধরনের তথ্য বহুমাত্রিক ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছে টিআইবি।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে প্রার্থীদের মধ্যে ১১৭ জন কোটিপতি।
৫৬০ চেয়ারম্যান প্রার্থীর ৯৪ জন, ৬১১ ভাইস চেয়ারম্যানের ১৭ জন এবং ৪৩৫ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে ছয়জন কোটিপতি প্রার্থী। এ ছাড়া পাঁচ বছরে উপজেলা চেয়ারম্যানদের অস্থাবর সম্পদও অনেক বেড়েছে।টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের সম্পদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির বিষয়টি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। প্রার্থীদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব রয়েছে।
সংসদ নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনেও ব্যবসায়ী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। পেশার দিক দিয়ে ৭০ শতাংশ চেয়ারম্যান প্রার্থী ব্যবসায়ী। ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রায় ৬৭ শতাংশ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর ২৪ শতাংশ ব্যবসায়ী।
টিআইবির গবেষণা বলছে, সার্বিকভাবে প্রার্থীদের ৪০ শতাংশের আয় সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে দেখানো হয়েছে। সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় দেখিয়েছেন মাত্র ১০ শতাংশ প্রার্থী।
দ্বিগুণ হয়েছে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা। এ ছাড়া ১০০ বিঘা বা ৩৩ একরের বেশি জমি আছে কমপক্ষে ১০ প্রার্থীর। ২৩.৪১ শতাংশ প্রার্থীর ঋণ রয়েছে। প্রার্থীদের ১৬.৬৪ শতাংশ বর্তমানে মামলায় অভিযুক্ত। পাঁচ বছরে একজন চেয়ারম্যানের আয় বেড়েছে সর্বোচ্চ ৩৩১৯ শতাংশ, ১০ বছরে এই বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ১৮২৩৩ শতাংশ। সর্বোচ্চ ৪২৫১ শতাংশ বেড়েছে অস্থাবর সম্পদ। স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের সম্পদ বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ১২৪০০ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ী প্রার্থীদের দাপট বাড়ছে। ব্যবসায়ী প্রার্থীদের সংখ্যা চতুর্থ নির্বাচনের তুলনায় ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ শতাংশে। চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৬৯.৮৬ শতাংশই ব্যবসায়ী, ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের প্রায় ৬৬.৫৯ শতাংশ, নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ২৪.৩৭ শতাংশ ব্যবসাকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন।
নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৫২.২২ শতাংশই নিজেকে গৃহস্থালি কাজকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন। তাঁদের সাড়ে ১৯ শতাংশের আয় আসে ব্যবসা থেকে, কৃষি থেকে আয় আসার উৎস দেখাননি। সার্বিকভাবে প্রার্থীদের ৪০ শতাংশই আয় দেখিয়েছেন সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে। অর্থাৎ করযোগ্য আয় নেই তাঁদের। সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় দেখিয়েছেন মাত্র ১০ শতাংশ প্রার্থী।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ জাতীয় নির্বাচনের তুলনায় কম। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নারী প্রার্থী আছেন মাত্র ২৫ জন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের হস্তক্ষেপ নিয়ে শঙ্কার মাঝে এবার বড় আলোচনার বিষয় হচ্ছে তাদের স্বজনদের মনোনয়ন।