অনলাইন ডেস্ক:
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার পাশাপাশি দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রেখে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু তা কিভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় হবে, সে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। আওয়ামী লীগ এমন কৌশলে সমঝোতা করতে চাইছে, যাতে সংসদের সম্ভাব্য বিরোধী দলের সঙ্গে ভোটের আগে আপসরফার বিষয়টি নির্বাচনের ওপর ছায়া না ফেলে।
এ বিষয়ে কৌশল ঠিক করতে গতকাল বুধবার রাতে রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগ ও জাপার শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা বৈঠক করেছেন।
জাপা মহাসচিব বলেন, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় দলের বনানী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন। সেখানে বৈঠকের বিষয়ে জানাবেন।
বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
জাপার সূত্র জানিয়েছে, জাপা কত আসন চায়, তা আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে। তাঁরা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে জানাবেন।
জাপার একাধিক প্রার্থী বলেন, সব আসনে নৌকার প্রার্থী রেখে আসন সমঝোতা সম্ভব নয়। নৌকার প্রার্থী আর আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সক্রিয় থাকলে জাপার জন্য জিতে আসা অনেক কঠিন হবে। ছোট ও নতুন নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন করে জিতে আসা জাপার জন্য তুলনামূলক সহজ।
বৈঠকে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘কিভাবে শান্তিপূর্ণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা তাদের প্রার্থী দিয়েছে। আমরা আমাদের প্রার্থী দিয়েছি। আমরা আমাদের নির্বাচন করব। আমরা সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই।’
জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের সজাগ দৃষ্টি আছে। ফলে সরকারি দলের সঙ্গে সংসদের বিরোধী দল জাপার আসন সমঝোতা হলে তা পাতানো নির্বাচনের আবহ তৈরি করবে। তাই এবার ভিন্ন কৌশল খুঁজছে তারাও। বৈঠকের বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা এর অন্যতম কারণ।
গত নির্বাচনে সমঝোতার মাধ্যমে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ, দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ ২৩ জন সংসদ সদস্য হন। সরকারের সঙ্গে তাদের ২৭ আসনে সমঝোতা হয়েছিল। তবে ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবার জাতীয় পার্টির গুরুত্ব বেড়েছে। গত নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও এবার তারা বর্জন করেছে। ফলে কয়েক মাস ধরে যে নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রার কথা বলা হচ্ছিল, তার যাত্রী আওয়ামী লীগ, তাদের শরিক ও মিত্র দলগুলো। এমন প্রেক্ষাপটে কোনো কারণে জাপার নির্বাচন বর্জন আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেলতে পারে। এ জন্য আওয়ামী লীগকে এখন জাপাকেও তুষ্ট রাখতে হবে।
জাতীয় পার্টির একজন নেতা বলেন, অন্তত ৫০ আসন নিয়ে তাঁরা আলোচনা শুরু করবেন। কোনোভাবেই গতবারের দেওয়া ২৭ আসনে তাঁরা সমঝোতা করবেন না। এর চেয়ে বেশি আসনে তাঁদের ছাড় দিতে হবে। একই সঙ্গে আসন ছাড় দেওয়ার কৌশলও পরিষ্কার হতে হবে। বিজয়ের বিশ্বাসযোগ্য নিশ্চয়তা না পেলে জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতার বৈঠকের বিষয়টি মঙ্গলবার প্রথম সামনে আনেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর সন্ধ্যায় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু জানান, জাপার সঙ্গে বুধবার (গতকাল) আলোচনা হবে।
তবে আগের রাতে গণভবনে বৈঠকের গুঞ্জন বিষয়ে জাপার মহাসচিব বলেন, ‘গণভবনে যাইনি। বৈঠকের বিষয় সঠিক নয়।’ আর গতকাল দুপুরে দলের বনানী কার্যালয়ে চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আলোচনা করতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আজ (গতকাল) বৈঠক হবে।
জাপা সূত্র জানিয়েছে, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএমসহ কয়েক মাস আগে নিবন্ধন পাওয়া দলগুলো রাজনীতির মাঠে কিংস পার্টি বলে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে সাড়া জাগাতে পারেনি। ফলে প্রধান বিরোধী দলের আসনে জাপা বসতে পারে তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়ার সংখ্যা বড় হলে তাঁরাও একটি দল গঠন করে বিরোধী দলে বসতে পারেন—এমন গুঞ্জনও আছে রাজনীতির মাঠে। ফলে জাতীয় পার্টিকে অনেক হিসাব-নিকাশ করে এগোতে হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক শেষে জাপা কো-চেয়ারম্যানরা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চৌধুরীর বাসায় বৈঠক করেন। সেখানে আলোচনার বিষয় জানানো হয়।