রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমার তার নাগরিক হিসেবে স্বীকার না করায় বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে তারা স্টেটলেস (রাষ্ট্রহীন)। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ‘রাষ্ট্রহীন’ এখন বাংলাদেশে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হিসাবে ২০২২ সাল শেষে বাংলাদেশে রাষ্ট্রহীন মানুষের সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩০০। গতকাল বুধবার ইউএনএইচসিআর প্রকাশিত ‘২০২২ সালের বৈশ্বিক জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির প্রবণতা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য রয়েছে।
২০১৬ সালে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বড় অংশকে বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য করে মিয়ানমার। ওই দেশটিতে এখনো ছয় লাখ ৩০ হাজার রাষ্ট্রহীন মানুষ আছে। তারা মূলত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর। রাষ্ট্রহীন মানুষের উপস্থিতির তালিকায় মিয়ানমার আছে তৃতীয় স্থানে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান বিশ্বে গড়ে প্রতি ৭৪ জনের মধ্যে একজনের বেশি মানুষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির শিকার। ইউএনএইচসিআরের প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির নতুন রেকর্ডের জন্য সংঘাত, নিপীড়ন, বৈষম্য, সহিংসতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো কারণগুলোকে দায়ী করেছেন। শরণার্থী ও আন্তর্জাতিক সুরক্ষার প্রয়োজন এমন মানুষের প্রায় অর্ধেকেরই উৎস রাষ্ট্র সিরিয়া, ইউক্রেন ও আফগানিস্তান।
ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম-কানুন ও ফেরত পাঠানোর বিষয়ে উদ্বেগ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশনের মূলনীতি অনুসরণে দেশগুলোর মধ্যে শিথিলতার মাত্রা বাড়তে দেখছি। এমনকি ওই কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী অনেক দেশের মধ্যেও এমনটি দেখা যাচ্ছে।’
প্রতিবেদনে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চল প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এই অঞ্চলের শরণার্থীদের ৯০ শতাংশেরও বেশি অবস্থান করছে মাত্র তিনটি দেশে। এগুলো হলো ইরান (৩৪ লাখ), পাকিস্তান (১৭ লাখ) ও বাংলাদেশ (৯ লাখ ৫২ হাজার ৪০০ জন)।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সবাইকে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের শরণার্থী হিসেবে গণ্য করে থাকে। ইউএনএইচসিআরের আরেক হিসাবে দেখা গেছে, বিশ্বে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের ৭৬ শতাংশকেই আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশের মতো নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো।