অনলাইন ডেস্ক:
জাতীয় সংসদের দশম (বিশেষ) অধিবেশনকে সামনে রেখে সংসদ ভবনজুড়ে উৎসবের আমেজ চলছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে নানা আয়োজন। নতুন সাজে সাজানো হয়েছে পুরো সংসদ ভবন এলাকা।
বিশেষ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেবেন তাই বাড়তি প্রস্ততিও নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
সংসদ সচিবালয়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ রবিবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় অধিবেশন শুরু হচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী (মুজিববর্ষ-২০২০) উপলক্ষে এই অধিবেশনকে বিশেষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অধিবেশনের প্রথম দিনে শোক প্রস্তাব ও অধ্যাদেশ উত্থাপন করা হবে। পরদিন ৯ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টায় বিশেষ অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হবে।
ওইদিন অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভাষণ দেবেন। বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য ও কর্মময় রাজনৈতিক জীবন নিয়ে রাষ্ট্রপতির স্মারক বক্তৃতার পর তা নিয়ে আলোচনার জন্য একটি সাধারণ প্রস্তাব আনা হবে। ওই প্রস্তাবের ওপর সরকার ও বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের দীর্ঘ আলোচনা শেষে তা পাস হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিশেষ অধিবেশনকে সামনে রেখে প্রস্ততি শেষ পর্যায়ে সংসদ সদস্য, সাংবাদিকসহ সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা চলছে। সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টার ও মেডিক্যাল সেন্টার এই পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। করোনা নেগেটিভ ব্যক্তিরাই বিশেষ অধিবেশনে প্রবেশ করতে পারবেন।
করোনাকালীন বিগত তিনটি অধিবেশনের মতো আগামী অধিবেশনেও সংসদ সদস্যরা রোস্টারভিত্তিতে অংশ নেবেন। তবে রাষ্ট্রপতির স্মারক বক্তৃতার দিন ৯ নভেম্বর করোনা নেগেটিভ সব সংসদ সদস্য অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন। এদিন প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, বিদেশী কূটনীতিক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও সমাজের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা সংসদ গ্যালারিতে উপস্থিত থাকবেন।
সংসদ ভবন ঘুরে দেখা গেছে, বিশেষ অধিবেশনকে সামনে রেখে সংসদ ভবনের অধিবেশন কক্ষে স্পিকার যেখানে বসেন, তার পেছনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি টানানো হয়েছে। সংসদ ভবনের লেকে ভাসানো হয়েছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য দৃষ্টিনন্দন দুটি নৌকা। দেশের স্বাধীনতা ও উন্নয়নের প্রতীক এই নৌকা তৈরি করেছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন।
সংসদ লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০ বাণী নিয়ে আলো-ছায়ার দৃষ্টিনন্দন কোলাজ করা হয়েছে। সংসদ ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায় প্যাণ্ডেল করে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে আলোকচিত্র ও প্রামাণ্য দলিলে পাকিস্তানের গণপরিষদ, স্বাধীন দেশে নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও সংসদে বঙ্গবন্ধুর কাজগুলো তুলে ধরা করা হবে।
একটি রাষ্ট্রের জন্ম, সংবিধান প্রণয়ন ও সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য বঙ্গবন্ধু যা কিছু করেছেন তা তুলে ধরা হচ্ছে। পাশাপাশি সংসদে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া বক্তব্যও বাজানো হবে। এছাড়া সংসদ ভবনের ভিতরে-বাইরে নানা ধরণের বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জানান, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে সতর্কতার সঙ্গে বিশেষ অধিবেশন বসবে। অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনের ওপর স্মারক বক্তৃতা করবেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর ওপর সাধারণ আলোচনা হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদেশি অতিথিরা না থাকলেও অধিবেশনকে স্মরণীয় করে রাখতে সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী বলেন, শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে অধিবেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এক্ষেত্রে কোনো শৈথিলতা দেখানো হবে না। অধিবেশনের আলোচনা, সাজসজ্জা ও প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম, দর্শন, রাজনৈতিক জীবন এবং মহান এই নেতার বর্ণাঢ্য জীবনের উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরা হচ্ছে। চার দিনের বিশেষ আলোচনা শেষে পরে অধিবেশনের সাধারণ কার্যক্রম চলবে বলেও তিনি জানান।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে গত ২২ মার্চ সংসদের বিশেষ অধিবেশন (সপ্তম অধিবেশন) আহ্বান করা হলেও দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় তা স্থগিত করেন রাষ্ট্রপতি। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি সব ধরনের অফিস-আদালত খুলে দেওয়ার প্রেক্ষাপটে সর্বশেষ নতুন করে অধিবেশন ডাকা হয়েছে। আগামী ৯ থেকে ১২ নভেম্বর বিশেষ কার্যক্রম চললেও বাকি দিনগুলোতে চলবে সাধারণ কার্যক্রম। অধিবেশন চলার সম্ভাবনা রয়েছে আগামী ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত।