অনলাইন ডেস্ক:
সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী একটা সংকট চলছে। এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অবস্থাকে ঘোলাটে করা ও ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চলছে। জাতীয় স্বার্থে এই প্রবণতাটা পরিহার করতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
জাতীয় সংসদ অধিবেশনে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ আহবান জানান।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে সম্পূরক প্রশ্ন করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তাঁর প্রশ্ন ছিল, বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব মোকাবেলায় একাত্তরের মতো রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার সম্ভাবনা কি আছে?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, যুদ্ধের ভয়াবহতা ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নিয়ে আমি খোলামেলা কথা বলেছি। যদিও অনেকে আমার সমালোচনাও করেছে। এখানেও কেউ কেউ বলেছে, আমি এ ধরনের কথা বললে মানুষ ভয় পেয়ে যাবে। মানুষকে ভয় পাওয়ার জন্য না, সতর্ক করার জন্য এবং প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য এটা বলেছি। ’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মাটি অত্যন্ত উর্বর। আমরা ফসল ফলাব, খাদ্য উৎপাদন করব। আমরা যে পারি, সেটা বিশ্বে বুঝিয়ে দিয়েছি অনেক ক্ষেত্রেই। ’
মুজিবুল হকের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব দল নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বললেন? আমার প্রশ্ন এখানে, দেশ যখন এমন ক্রান্তিলগ্নে পড়ে তখন আমাদের যাঁরা বিরোধী দলে আছেন, আমি সবার কথা বলছি, তাঁদের মধ্যে ওই উদ্বেগ আমরা দেখিনি। বরং দেখেছি এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অশান্ত পরিবেশ কিভাবে সৃষ্টি করা যায়, সেটাই যেন তাঁরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এটা করাটা কি সমীচীন হচ্ছে? সমীচীন হচ্ছে না। তাহলে ওই অনুভূতিটা কোথায়? অনুভূতিটা থাকতে হবে দেশের পথে। দেশপ্রেমটা থাকতে হবে। আজ বিশ্বব্যাপী সংকট। এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অবস্থাকে ঘোলাটে করা আর ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্ট করা, এই প্রবণতাটা পরিহার করতে হবে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ শুধু মুখে বললে হবে না। নিজের থেকে পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা কিন্তু সবাইকে নিয়ে কাজ করি। আমরা যখন উন্নয়নটা করি। কোন এলাকাটা আমাদের ভোট দিলে বেশি আর কোন এলাকা দিল না, সে বিবেচনা করি না। জনমানুষের জন্য আমাদের উন্নয়ন। গণমানুষের কথা চিন্তা করে আমরা কাজ করি। ঠিক তেমনি দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা বসে থাকিনি। অনেকে তো সমালোচনা করে যাচ্ছে। বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একমুট চালও দিয়ে বা হাত দিয়ে পানি থেকে কাউকে উদ্ধার করতে দেখিনি। ’ তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় ঐক্যে বিশ্বাস করি। যাঁরা আসবেন তাঁদের সঙ্গে আমরা কাজ করব। এতে কোনো সন্দেহ নেই। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কেবল নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কষ্টে ভুগছে। পণ্যমূল্য পরিবহনের জন্যও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেখান থেকে খাদ্য বা তেল কিনতাম যুদ্ধের কারণে কিনতে পারছি না। বিকল্প জায়গা খুঁজে বের করছি। সেখান থেকে যাতে আমরা খাদ্য, জিজেল, তেল, সার আনতে পারি সেই ব্যবস্থা করছি। এমনকি এলএনজি আমদানির জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং নিয়েছি। ’
যুদ্ধের নিষেধাজ্ঞায় বিশ্বব্যাপী মন্দা : গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সেই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা। এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ফলে বিশ্ববাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। সারা বিশ্বের অবস্থাই খুব টালমাটাল। তিনি বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশ থেকে এখন পর্যন্ত ভালো অবস্থায় আছে বলে মনে করি। ইউরোপ, আমেরিকা, ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রতিটি জায়গায় জ্বালানি তেলের অভাব, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য ব্যবস্থা সব জায়গায় লোড শেডিং। ব্রিটেনে বিদ্যুতের দাম ৮০ শতাংশ বেড়েছে। তারা সব কিছু রেশন করে দিচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে যাতে প্রভাবটা না পড়ে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। ’
অসাধু ব্যবসায়ীরা মানুষের দুর্ভোগের কথা ভাবে না : বাজার থেকে পণ্য গায়েব হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তো আছেই। এই অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের আর্থিক লাভের কথা চিন্তা করে, মানুষের দুর্ভোগের কথাটা চিন্তা করে না। এ জন্য তারা অনেক সময় পণ্য লুকিয়ে রাখে এবং কৃত্রিম উপায়ে জিনিসের দাম বাড়ায়। এতে অনেকের ইন্ধনও থাকতে পারে। তবে তাদের সঙ্গে সঙ্গে খোঁজা হয়, ধরা হয়। এরই মধ্যে অনেক পণ্য কিন্তু খুঁজে বের করা হয়েছে এবং তা বাজারজাত করা হয়েছে। যারা পণ্য লুকিয়ে রেখে মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টা করে, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ চলমান থাকবে।
দাম বেড়েছে বলেই খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি : একটি জাতীয় দৈনিক ও একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে, তা জানতে চান বিএনপির রুমিন ফারহানা।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার কিছু লোক থাকে। এবং সেই সব লোকের কথাই মাননীয় সদস্য বলেছেন। যে পত্রিকাগুলোর নাম তিনি নিয়েছেন তার মধ্যে একটা পত্রিকা কিন্তু আমি কখনো পড়ি না। পড়ি না এই কারণে, তারা সব সময় উল্টো দিকে থাকে। এরা কখনো বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক তা চায় না। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তারা পছন্দ করে। পছন্দ করে এ জন্য যে তাদের একটু ভালো হয়, কোনো রকম কদর বাড়ে সে জন্য। আর যে প্রতিষ্ঠানটির কথা বলেছেন, এই প্রতিষ্ঠানটি কোন জায়গা থেকে হিসাব পায় জানি না। এই হিসাব তাদের কখনোই সঠিক হিসাব হয় না। বাংলাদেশে তো দাম বেড়েছে, আমি তো অস্বীকার করছি না। আর দাম বেড়েছে বলেই না আমরা ভর্তুকি দিয়ে স্বল্পমূল্যে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হেডলাইন দিয়েছে সব দেশের থেকে বাংলাদেশে পণ্যমূল্য বেশি। কিন্তু ভেতরে যে ডাটা দিয়েছে সেখানে বাংলাদেশ হিসাবে আসে না। বাংলাদেশ কয়েকটা দেশ থেকেই ভালো অবস্থায় আছে। এরা কারসাজিটা এভাবেই করে। প্রতিটি ক্ষেত্রে কিছু কিছু পত্রিকা এখন এমনভাবে একটা হেডলাইন করে যা বিভ্রান্তিকর। ভেতরে জাতি দেখুক সেটা সঠিক না। সঠিক তথ্য তারা দেয় না। বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে প্রতিষ্ঠানটির কথা উনি (রুমিন) উল্লেখ করেছেন সে প্রতিষ্ঠানের তো কোনো কিছুই ভালো লাগে না। তাদের ভালো লাগে কখন, যখন সেনাশাসন ছিল, যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল, তাদের একটু কদর বাড়ত। এই আশায় তারা বসে থাকে, এটাই বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য কী করা যায় সংসদ সদস্য হিসেবে সবারই সেটাই করা উচিত। আর যে পত্রিকা আর যে প্রতিষ্ঠান, ওই প্রতিষ্ঠানের সবাইকে আমার খুব ভালো চেনা আছে। আমাদের মতিয়া আপার ভাষায় বলতে হয়, একটা প্রতিষ্ঠান আছে তার প্রধানকে মতিয়া আপা নাম দিয়েছেন; আসল নাম বাদ দিয়ে বলেছেন সেনাপ্রিয়। অর্থাৎ অস্বাভাবিক একটা পরিস্থিতিতে তাদের একটু দাম বাড়ে, মূল্য বাড়ে, এটাই বাস্তবতা। আমরা জনগণের পাশে আছি জনগণের সঙ্গে থাকব। তারা যেটা বলছে বলতে দিন। আমার কাজ যা করার সেটা আমি করে যাব। ’