চট্টগ্রামের সহিংসতার জন্য দুষ্কৃতকারীদের দায়ী করেছেন সনাতন একতা মঞ্চের সভাপতি মিথুন ভট্টাচার্য (শুভ)। তিনি বলেছেন, ‘সংখ্যালঘুদের নেতা চিন্ময় প্রভুকে নিয়ে যা ঘটেছে, সেটা থেকে বোঝা যায় আন্দোলনের মধ্যে দুষ্কৃতকারী রয়েছে। এটার দায় সম্পূর্ণ দুষ্কৃতকারীদের। এর দায় সনাতনীদের না।
’ দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আজ বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল এবং সনাতন নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমাদের যখন হিন্দু বলে এই দেশে গায়ে হাত তোলা হয় তখন খুব কষ্ট হয়। মনে প্রশ্ন জাগে, আমরা কি এই দেশে জন্ম নিয়ে কোনো ভুল করলাম? সরকারপক্ষ কি সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে কোনো ভূমিকা নেবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধানের চারটি মূল ভিত্তির একটি।
তাই সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা স্তম্ভটি কখনোই বাতিলযোগ্য নয়। এসংক্রান্ত প্রস্তাব অনাকাঙ্ক্ষিত।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি সুস্মিতা কর। তিনি বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষবাদ বলতে সাধারণত রাষ্ট্র আর ধর্মকে পৃথকরূপে প্রকাশ করাকে বোঝায়।
এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে ধর্ম বা ধর্মীয় রীতিনীতির বাইরে থেকে পরিচালনা করাকে বোঝানো হয়। রাষ্ট্রের আইন কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের ওপর নির্ভরশীল থাকে না। সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো, তথ্য এবং প্রমাণের ওপর নির্ভর করবে, কোনো ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর নয়। অর্থাৎ বলা যায়, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার।
’বর্তমান সরকার ও সংবিধান প্রণেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনী বিলটি তৎকালীন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ সংসদে এনেছিলেন ২০১১ সালের জুন মাসে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধানের মৌলিক কিছু বিষয়ও ফিরিয়ে আনা হয়। রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয়। তবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখা হয়।’তিনি বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানের চারটি মূল ভিত্তির একটি। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা কখনোই এই ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল হোক চাই না ও আগামীতেও চাইবে না। এটা আমাদের একটা বড় শক্তি ও সাহস মনোবলের স্থান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে, এটা আমাদের জন্মগত অধিকার। কারণ, আমরা এই দেশের ভূমিতে জন্মগ্রহণ করে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছি। এককথায় এটাই আমাদের একমাত্র অবলম্বন, এটাই আমাদের সর্বেসর্বা।’
লিখিত বক্তব্যে সুস্মিতা কর বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, আমাদের সনাতনী নেতাদের বিভিন্ন স্থানে মিথ্যা, বানোয়াট মামলা দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। অনতিবিলম্বে তাদের মামলা প্রত্যাহার করে মুক্তি প্রদানের সবিনয়ে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সনাতনীরা জোটবদ্ধ হয়ে আমাদের অধিকার আন্দোলনের জন্য ৮ দফা ইতিমধ্যে বর্তমান সরকারের কাছে পেশ করেছি। কিন্তু পূজার ছুটি ছাড়া সরকার আমাদের সাথে আর কোনো ব্যাপার নিয়ে কথা বলেনি। দাবি বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ৮ দফার জন্য আন্দোলন অব্যাহত রাখা হয়েছে।’