Saturday , 23 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
সংবাদপত্র হচ্ছে গণতন্ত্রের চোখ : কাদের গনি চৌধুরী
--সংগৃহীত ছবি

সংবাদপত্র হচ্ছে গণতন্ত্রের চোখ : কাদের গনি চৌধুরী

অনলাইন ডেস্কঃ

বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, ‘সংবাদপত্র দৈনন্দিন জীবনের তৃতীয় নয়ন। এর মাধ্যমে আমাদের সামনে ভেসে ওঠে সমগ্র পৃথিবী। সংবাদপত্রের প্রধান কাজ সমাজ জীবনের নানা ত্রুটিবিচ্যুতি পর্যালোচনা করে পথনির্দেশ করা। এ জন্য সংবাদপত্রকে ফোর্থ স্টেট বা চতুর্থ রাষ্ট্র বলা হয়।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের সভাপতি সদ্যঃপ্রয়াত রুহুল আমিন গাজীর স্মরণে আজ শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় সিলেট প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক নাগরিক শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব বলেন।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘সংবাদপত্রকে বলা হয় চলমান ইতিহাস।

তিনি বলেন, ‘বিশ্বায়ন ও অবাধ তথ্য-প্রযুক্তির যুগে মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই গণমাধ্যমের কোনো না কোনো ভূমিকা রয়েছে। মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে প্রযুক্তি এবং সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন বিকাশ মিডিয়ার মাধ্যম হয়েছে।

রাষ্ট্রের সবগুলো প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ বা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলেও মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে যে প্রদীপ শিখাটি জ্বলতে থাকে, তা হলো গণমাধ্যম।’

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, ‘সংবাদপত্র হলো একটা দেশ, সমাজ ও জাতির মুখপাত্র। একটা জাতি বাকস্বাধীনতা কতটা ভোগ করে তা গণমাধ্যমকে দেখলেই বোঝা যায়। একজন স্বাধীন ও মুক্তমনা সাংবাদিককে তথ্যের জন্য কঠিন ও কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। দুরন্ত ও সাহসী হতে হয়। অনেক সময় ভয়ের কারণে সত্য নিউজ করতে চায় না। অন্যায় নিপীড়ন দুর্নীতি দেখেও চুপ থাকে। পরিবারের কথা ভেবে অনেকে চুপসে যায়। ফলে সত্য থেকে যায় আড়ালে। প্রকৃতপক্ষে একজন সৎ ও সাহসী সাংবাদিক কখনো সত্যকে আড়াল করতে পারে না। তারা কখনো লোকভয় ও রাজভয় করে না। সব সময় তারা অনুসন্ধানী হয়। দেশ-বিদেশে এমন অনেক সাংবাদিক রয়েছেন, যারা সত্য চাপিয়ে যেমন আলোড়ন তৈরি করেছিলেন, তেমনি জীবনও দিতে হয়েছিল। বব অ্যাডওয়ার্ড, সেন্ড লুইস পেস্ট ডিসপ্যাচ, উইল ফ্রেড ব্রুচেট, পিটার আর্নেস্ট, জন পিটার, এলিজা প্যারিস লডজয়, মার্গারেট ব্রুক হোয়াইটসহ প্রমুখ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকর্মীরা বিখ্যাত হয়ে আছেন সত্য প্রকাশের জন্য।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশেও অনেক দুরন্ত সাহসী সাংবাদিক ছিলেন, যারা ৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধেও ভূমিকা রেখেছিলেন। তাদের মধ্যে জহুর হোসেন চৌধুরী, মাওলানা মুহাম্মদ আকরম খাঁ, আব্দুস সালাম, আবু জাফর, রিয়াজুদ্দিন আহমদ, গিয়াস কামাল চৌধুরীসহ প্রমুখ প্রবীণ ও নবীন গণমাধ্যমের সাহসিকতা হিসেবে অমর হয়ে আছেন। মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান, রুহুল আমিন গাজী জেল-হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন, তবু তারা পিছপা হননি।’

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘সাংবাদিকতা অত্যন্ত কঠিন পেশা। রক্তচক্ষু উপেক্ষার সাহস না থাকলে সাংবাদিকতা নয়। সত্যিকথা বলতে চারপাশে কেবল দাসত্ব আর তোষামোদি দেখে দেখে আমরা নির্বিকার হয়ে পড়েছি। সাংবাদিকতায় আমরা যাদের পরম্পরা বহন করছি, সেই গৌরবের ইতিহাস আমাদের সামান্যই প্রভাবিত করছে। আমরা এখন সাংবাদিকতার মহান ব্রতকে বিসর্জন দিয়ে অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার মানসে।’

তিনি বলেন, ‘সমকালীন সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার অন্দরে প্রবেশ করে যদি আমরা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে স্মরণ করি তবে লজ্জায় নত হতে হয়। সাংবাদিকতার মানস-মূল্যবোধ আজ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে! একটি স্বাধীন দেশে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে আমরা স্বাধীনতার জন্য রীতিমতো কান্নাকাটি করছি। অথচ সত্য উচ্চারণে চিরকালই বাধা আসবে, গ্লানি থাকবে-তবু সত্যকে আলিঙ্গন করতে হবে-সাংবাদিকতায় এটিই বাস্তবতা। সেখানে সত্য উচ্চারণের পথ এতটা নিষ্কণ্টক হবে তা আমরা আশা করি কী করে? অতীত যেন আমাদের ভৎর্সনা করে বলছে, বাধাকে, রক্তচক্ষুকে ডিঙিয়ে যাওয়ার সাহস যদি নাই থাকবে তবে এ পথ তোমার নয়।’

সিলেট মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (এসএমইউজে) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সিনিয়র সাংবাদিক এনামুল হক জুবেরের সভাপতিত্বে ও এসএমইউজের সাধারণ সম্পাদক খালেদ আহমদের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আলিমুল ইসলাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলাম, ইবনে সিনা হাসপাতাল সিলেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাওলানা হাবিবুর রহমান ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ডা. শামীমুর রহমান। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন এসএমইউজের সভাপতি মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বদর। দোয়া পরিচালনা করবেন মাওলানা শাহ মো. নজরুল ইসলাম।

সভায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আলিমুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সদ্য প্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ছিলেন একজন আপসহীন সাংবাদিক নেতা। সাংবাদিকদের রুটি-রুজির আন্দোলনে তিনি সব সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার মতো এমন সাহসী নেতৃত্ব সাংবাদিক জগতে বিরল। দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব যখনই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে তখনই তিনি বুক চিতিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। সর্বশেষ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় অসুস্থ থাকার পরও তিনি রাজপথে নেমে সাংবাদিকদের সাহস জুগিয়েছেন। তার মৃত্যু সাংবাদিকতা জগতে একটি শূন্যতা সৃষ্টি করেছে।’

ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, ‘সাংবাদিকদের অন্যতম সর্বোচ্চ এই নেতার মারাত্মক কিডনির সমস্যা ছিল। এরপরও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে ১৭ মাস জেলে রাখে। সেখানে তাকে উপযুক্ত চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হয়নি। চিকিৎসায় অবহেলা করে তাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এজন্য স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার এবং ওই সময় দায়িত্বপালন করা কারাগারের জেলার ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা উচিত। তাদের গ্রেপ্তার করে বিচার করতে হবে।’

শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘রুহুল আমিন গাজী ভাই নেই, বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই তাকে চিনি। তিনি ছিলেন একজন অসীম সাহসী নেতা। প্রতিকূল পরিবেশেও তিনি সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। সর্বশেষ ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতনের আগের দিনও তিনি অসুস্থ অবস্থায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পেশাজীবীদের আন্দোলনে রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম বলেন, ‘রুহুল আমিন গাজীর একটি কিডনি কেটে ফেলতে হয়েছিলো। এ ধরনের রোগীকে নিয়মিত চিকিৎসা দিতে হয়। কিন্তু তাকে জেলে নিয়ে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হয়নি। তাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তিনি মূলত একজন শহীদ।’

জামায়াতে ইসলামীর আমির হাবিবুর রহমান বলেন, ‘রুহুল আমিন গাজী ভাইকে হারিয়ে একটি শূন্যতা অনুভব করছি। তার মতো এমন সৎ সাহসী নেতৃত্ব বিরল। তার মধ্যে কোনো মৃত্যুভয় ছিলো না। কোনো ভীরুতা ছিল না। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সাংবাদিকদের পেশাবিরোধী সব কালাকানুনের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ করেছেন। এ জন্য তাকে ১৭ মাস কারাগারে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। তার পরিবারকে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে।’

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply