অনলাইন ডেস্ক:
সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম দেয় রাষ্ট্র। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটেছে এ প্রচলিত নিয়মের। বরং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে অনন্য অবদান রেখেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এই ভূখন্ডে সংঘটিত সব আন্দোলন-সংগ্রামে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
এ সময়ে শাসক-শোষক শ্রেণির অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে সেগুলোতে চালকের আসনে ছিল পাশ্চাত্যের অক্সফোর্ডখ্যাত এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯২১ সালের এক জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তিনটি অনুষদ, ১২ টি বিভাগ এবং ৮৪৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার এই দিনটি প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালিত হয়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস বাঙালির অন্যসব অর্জনের মত প্রতিকূলতার ইতিহাস। ১৮৪৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের পর সমস্ত ভারতবর্ষে একপ্রকার নবজাগরণ তৈরি হতে থাকে। আর এই নবজাগরণ তৈরি করে শিক্ষিত সমাজ।
তৎকালীন পূর্ব বাংলায়ও তৈরি হয় এমন শিক্ষিত সমাজ। আর এই শিক্ষিত সমাজ অনুভব করে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ঐ বছরের ২৭ মে গঠিত হয় ১৩ সদস্য বিশিষ্ট নাথান কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য এই নাথান কমিশন গঠিত হয়। অবশেষে ১৯২০ সালের ১৩ ই মার্চ ভারতীয় আইনসভায় ‘দ্যা ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট ১৯২০’ পাশ হয় এবং ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল এই বিলে সম্মতি প্রদান করেন। ১৯২১ সালের ১ জুলাই যাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে নিজস্ব স্বাধীন প্রতিবাদী চিন্তা ধারা তৈরি করে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মুসলিম লীগের ডাকে পাকিস্তান আন্দোলনে সাড়া দেয়। পাকিস্তান আদায়ের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে। পাকিস্তান আদায়ের পর ১৯৪৮ সালে যখন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কার্জন হল প্রাঙ্গণে উদ্যোগে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন তৎক্ষণাৎ ছাত্ররা এর বিরোধিতা করে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে ভাষা আন্দোলন সংগঠিত হয়। আর এই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমরা ভাষার দাবি সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারি।
ভাষা আন্দোলন নয় শুধু, বাঙালির অধিকার আদায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ এর ছয় দফা,৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ গঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১৯৭১ সালের দুই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই সর্বপ্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। স্বাধীনতার আগে যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিল স্বাধীনতার পরেও দেশের গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনও এর অংশ।
বাংলাদেশে তৈরি ও বাংলাদেশ গঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। শেখ মুজিবুর রহমান ,তাজউদ্দিন আহমেদ ,সৈয়দ নজরুল ইসলাম ,জগদীশচন্দ্র বসু ,ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, হুমায়ূন আহমেদসহ দেশ বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও বিখ্যাত মানুষজন এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই। যারা দেশ ও জাতি গঠনে রেখেছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন