অনলাইন ডেস্ক:
আগামী ২০ রোজার মধ্যে শ্রমিকদের পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাস ও চলতি মাসের মজুরিসহ সকল বকেয়া পরিশোধ এবং মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি)। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি শেষে সংগঠনের নেতারা এই দাবি জানান। এ ছাড়া শ্রমিক সমাবেশ থেকে কাল বিলম্ব না করে গার্মেন্ট শ্রমিদের মজুরি বৃদ্ধি এবং জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র’র সভাপতি অ্যাড. মন্টু ঘোষের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, কার্যকরী সভাপতি কাজী রুহুল আমীন, সহ-সভাপতি ইদ্রিস আলী, জিয়াউল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা সাদেকুর রহমান শামীম, এমএ শাহীন, কেএম মিন্টু, মঞ্জুর মঈন, জয়নাল আবেদীন, দিলীপ নাথ, মোজাম্মেল হক, আমিনুল ইসলাম, সাবিতা রানী, রিনা আক্তার প্রমুখ।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে শ্রমিকনেতা মন্টু ঘোষ বলেন, দেশে সবচেয়ে বিলাসবহুল জীবন যাপন করেন গার্মেন্ট মালিকরা কিন্তু শ্রমিকদের পাওনার কথা আসলে তারাই সবচেয়ে বিত্তহীন হয়ে যান। অথচ মালিকরা কেনা-কাটা ও ঈদ উদযাপনের জন্য কানাডা-আমেরিকা-মালয়েশিয়ায় পারি জমান। প্রতি বছর ঈদ উৎসবের সময় গার্মেন্ট শ্রমিকরা উৎসব বোনাস থেকে বঞ্চিত হয়।
তিনি বলেন, ২০ রোজার মধ্যে চলতি মাসের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করা না হলে ঈদের আগে শ্রমিকদের অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হবে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বেসিকের সমান বোনাসের দাবি অন্যান্য বছরের মতো এবারও যদি সর্বত্র উপেক্ষিত হয় তাহলে উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে। সংকট সৃষ্টির পূর্বেই তিনি সরকারি সংস্থাসমূহকে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানান।
সমাবেশে শ্রমিকনেতা জলি তালুকদার বলেন, প্রায় চার বছর আগে বাজার পরিস্থিতি ও শ্রমিকপক্ষের দাবি উপেক্ষা করে গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিম্নতম সমুদয় মজুরি ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। মুদ্রাস্ফীতির হার সম্পর্কে সরকারি বয়ান অনুসারেই একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বর্তমান বাজারে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী মানুষের জীবনে নীরব দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অতীতের সকল নজির অতিক্রম করেছে। শ্রমিকের জীবন বাঁচানোর পদক্ষেপ হিসেবেই সরকারকে অবিলম্বে মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা দিতে হবে।
তিনি বলেন, পৃথিবীর সর্বোচ্চ রপ্তানি করেও সর্বনিম্ন মজুরি পাওয়া শ্রমিকরা আজ তিল পরিমাণ মাসিক আয় নিয়ে সাগর সমান জীবন ব্যয়-এর মুখোমুখী অসহায় দাঁড়িয়ে আছে। বিস্ফোরণের পূর্বেই সরকার মজুরি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিলে তা সব পক্ষের জন্যই ভালো হবে। তিনি অবিলম্বে জাতীয় নিম্নতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানান।
শ্রমিকনেতা কাজী রুহুল আমীন দাবি জানান, গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য মজুরি বোর্ড গঠন এবং নতুন মজুরি হার ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত শ্রমিকদের মহার্ঘ্য ভাতা দিতে হবে। তিনি একই সাথে আগামী জাতীয় বাজেটে গার্মেন্ট শ্রমিকদের আবাসন, রেশনিং ও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দের দাবি জানিয়ে বলেন, যে শ্রমিকদের উদয়অস্ত শ্রমে আর অবদানে দেশের অর্থনীতি সচল আছে তাদের জন্য আজ পর্যন্ত কোনোদিন বাজেটে পৃথক বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। অথচ মালিকরা কর রেয়াত, শুল্ক অবকাশসহ সকল প্রণোদনা ভোগ করে থাকেন।
সমাবেশ থেকে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি এবং ২০ রোজার মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাস ও চলতি মাসের সম্পূর্ণ মজুরিসহ সকল বকেয়া পরিশোধের দাবিতে শিল্পাঞ্চলসমূহে গেট মিটিং, পথসভা ও মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। শ্রমিক সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহ প্রদক্ষিণ করে।
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন