আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে মুখোমুখি শেষ বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প আর জো বাইডেনের আচরণ কেমন থাকতে পারে, তা নিয়ে উৎকণ্ঠা ছিল যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও। বাংলাদেশ সময় গতকাল শুক্রবার ভোরে অনুষ্ঠিত এ বিতর্কে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প এবং ডেমোক্রেট প্রার্থী বাইডেন ছিলেন অত্যন্ত সংযত, ভদ্রোচিত—যদিও তীক্ষভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে ও নিজের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন। তবু এ বিতর্ক অনেকটাই নিয়মতান্ত্রিক ও পেশাদারিপূর্ণ হয়েছে বলে মনে করেন প্রবাসী বিশ্লেষকরাও।
টেনেসির ন্যাশভিলে বেলমন্ট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই বিতর্কে করোনার ইস্যু ছাড়াও অভিবাসন, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, বর্ণবাদ, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে।
এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম বিতর্কে দুই প্রার্থীর আচরণই ছিল অনেকটা আক্রমণাত্মক, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আজেবাজে কথাবার্তা বলে বাইডেনকে অপমানের চেষ্টা করেছেন, বক্তব্যে বাধা দিয়েছেন। ফলে দ্বিতীয় বিতর্ক বাদ হওয়ার পর তৃতীয় বিতর্কে মিউট বাটন চালুসহ বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হয় আয়োজকদের। এতে বিতর্কের সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়নি বলেও অনেকে মনে করেন। যদিও এবারের বিতর্কে প্রশ্নোত্তর পর্বে দুই প্রার্থীই একে অপরের বক্তব্যের মধ্যেই কিছু কথা বলেছেন।
শেষ বিতর্কটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন এনবিসি টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা ক্রিস্টিন ওয়াকার। বিতর্ক শুরুর আগেই বারবার বলে দেওয়া হয় মিউট বাটনের জন্য সঞ্চালক কোনো অবস্থাতেই দায়বদ্ধ নন।
বিতর্ক প্রসঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির কমিউনিকেশন স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শফিক রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। বিতর্কটির শেষপ্রান্তে জো বাইডেন যেভাবে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন, সেটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে বলে আমার ধারণা। বিশেষ করে বাইডেন গোটা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে চান, রেড বা ব্লু স্টেটে বিভক্ত দেশের নয়।’ সেই অর্থে ট্রাম্প বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে পারেননি বলে ধারণা শফিক রহমানের। তিনি এর পরও প্রথম বিতর্কের চেয়ে ট্রাম্প অনেক ভালো করেছেন বলে মনে করেন।
ড. শফিক বলেন, করোনা ইস্যুতে কার্যত বাইডেন ট্রাম্পকেই দায়ী করেছেন। তবে এই বিতর্কে ট্রাম্প অনেকটা কৌশলগত বক্তব্য দিয়ে সেটা মোকাবেলা করার চেষ্টা করেছেন। অভিবাসন, বর্ণবাদ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিতর্ক জমে উঠেছিল বলে মনে করেন এই শিক্ষাবিদ। কিন্তু বাইডেনকেই তিনি এগিয়ে রাখতে চান।
অন্যদিকে বাংলাদেশি-আমেরিকান রিপাবলিকান এলায়েন্সের চিফ কো-অর্ডিনেটর মুশতাক চৌধুরীও মনে করেন, ‘শেষ বিতর্ক ভালো হয়েছে।’ প্রত্যাশা পূরণ করেছে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রথমটির তুলনায় অনেক প্রফেশনাল মনে হয়েছে।’ এই বিতর্কে দুই প্রার্থীই একে অপরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন। সে ক্ষেত্রে বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের চীন ও ইউক্রেনের সঙ্গে লেনদেনের প্রসঙ্গ এনে ট্রাম্প যেভাবে কথা বলেছেন, সেটি বিতর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করেন মুশতাক চৌধুরী। তিনি মনে করেন, তাঁর দৃষ্টিতে বিতর্কে ট্রাম্প অনেক ভালো করেছেন।
ন্যাশভিলের শেষ বিতর্কেও ছিল ব্যক্তিগত আক্রমণের ছড়াছড়ি। দুই প্রার্থীই যে একে অপরকে ভয়াবহ অপছন্দ করেন, এদিনের আলোচনায় ফুটে উঠেছিল তা-ও। বিতর্কে করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলা নিয়ে দুই প্রার্থী বিপরীতধর্মী অবস্থান নেন। অভিবাসন ইস্যুতে ট্রাম্প বলেন, এ দেশে আসতে হলে বৈধভাবে আসতে হবে। মেধাভিত্তিক অভিবাসন ব্যবস্থার কথা বলেন তিনি। অন্যদিকে মানবিক অভিবাসন ব্যবস্থার কথাই ফুটে উঠেছে জো বাইডেনের কথায়।
বাংলাদেশ ল সোসাইটি, নিউ ইয়র্কের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আলী বাবুল বলেন, ‘বাইডেন যেভাবে আনডকুমেন্টেডদের বৈধতা দেওয়া এবং ড্রিমারদের (শৈশবে যাঁরা অবৈধ উপায়ে মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন) বিষয়ে কার্যকর কিছু করার কথা বলেছেন, এতে নিঃসন্দেহে অভিবাসী আমেরিকানদের বড় সমর্থন পাবেন তিনি।’ বিতর্ক যাই হোক, শেষ বিচারে ভোটাররাই কথা বলবেন ব্যালটের মাধ্যমে। তার জন্য ৩ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথাই বলেন এই আইনজীবী।