শেরপুর প্রতিনিধি: শেরপুর জেলার সর্বত্রই দাদন ব্যাবসায়ীদের দৌরাত্ম ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। দাদন ব্যবসায়ীদের ফাদেঁ পড়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। তারা সুদের টাকা লগ্নি করার সময় সাদা চেকে স্বাক্ষর নিয়ে রাখে। পরে তাদের চাহিদা মতো টাকা না পেলে তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী টাকার অংক বসিয়ে আদালতে মামলা ঠুকে দেয় বা দেয়ার হুমকি দেয়। শেরপুরের নকলা উপজেলার হালগড়া গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে দাদন ব্যবসায়ী সুজনের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হয়েছেন নকলার চন্দ্রকোনা কলেজের আইসিটি বিভাগের শিক্ষক মাহাদী মাসুদ লিটন। মাত্র ৫০ হাজার টাকা নিয়ে সুদে-আসলে এখন ৫ লাখ টাকা দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে তাকে মাসে ৫০ হাজার টাকা সুদই দিতে হয়। তাই তার বাবার দেয়া সম্পত্তিও বিক্রি করে দেনা শোধ করতে পারেননি। অতিরিক্ত সুদের টাকা না পেয়ে সুজন ৫ অক্টোবর বিকেলে তার ভাড়াটিয়া বাহিনী নিয়ে এসে শিক্ষক লিটনের চন্দ্রকোনা রানীগঞ্জ গ্রামের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। ভাংচুর করা হয় আসবাবপত্রও। লুট করে নেয় নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ অন্তত ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল। ঘন্টাব্যাপী তান্ডব চালিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয় লিটনের আধাপাকা বাড়ি। এসময় দাদন ব্যবসায়ী সুজনের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি।
শিক্ষক মাহাদী মাসুদ লিটন জানান, আমি এ দাদন ব্যবসায়ীর পাল্লায় পড়ে সর্বশান্ত হয়ে গেছি। এখন আমার কিছুই নাই। আমার সাদা চেক নিয়ে চাকুরীর ভয় দেখিয়ে আমার সব কিছু হাতিয়ে নিয়েছে। শিক্ষক মাহাদী মাসুদ লিটনের মা জবেদা বেগম জানান, এতগুলো মানুষ আইসা আমাগো বাড়ী ভাংচুর লুট করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। আমার ছেলে লিটনকে পেলে তারা মেরে ফেলতো। স্থানীয়রা দাদনব্যবসায়ীর এমন তান্ডবের তীব্র নিন্দা ও এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন। এলাকাবাসীদের মধ্যে শহিদুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, সুলতান মিয়া ও করোনা বেগম জানান, আমরা সুদখোরদের বিচার চাই। এরা মানুষদের ধ্বংস করে ফেলছে।
এদিকে একজন শিক্ষকের কাছ থেকে সাদা চেক নিয়ে তার ওপর নির্যাতন ও তান্ডবের প্রতিবাদ ও ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় শিক্ষকগণ। তারা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। নকলার চন্দ্রকোনা কলেজের অধ্যক্ষ ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম, জানান, শিক্ষক দিবসে একজন শিক্ষকের ওপর এমন জুলুম অত্যাচার মেনে নেয়া হবে না।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ঘটনা শোনার সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। এ বিষয়ে ২০ জনকে স্ব-নামেসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ৭জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলে শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আমিনুল ইসলাম জানান।