গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশত্যাগ করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পরিস্থিতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও শেষ পর্যন্ত স্বাভাবিক থাকেনি ঢাকার রাজপথ। আন্দোলনকারীরা শত বাধা উপেক্ষা করে ঢাকায় প্রবেশ ও গণভবন অভিমুখে যাত্রা শুরু করে।
এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হতে থাকে।
এরপর খবর এলো সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। পরে বিকেলে সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন।
দেশত্যাগের আগে কী করেছিলেন শেখ হাসিনা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার আগে বঙ্গভবনে যেতে চেয়েছিলেন। তবে সেখানে তিনি যেতে পারেনি।
এ ছাড়া তিনি রেডিও-টেলিভিশনে ভাষণ দেওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। বলেছিলেন- দীর্ঘ নয়, অল্প সময় কথা বলবেন তিনি। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি এবং সেনাপ্রধানের অনাগ্রহে সে সুযোগ পাননি শেখ হাসিনা। তখন তাকে বলা হয়, চারদিকে লোকজন জড়ো হয়ে গেছে।
সবাই মারমুখো। অল্প সময়ের মধ্যেই তারা গণভবনে পৌঁছে যেতে পারে। তার নিরাপত্তার কথা ভেবেই তাকে সে সুযোগ দেওয়া যাবে না। হাসিনা বিরক্ত, ক্ষুব্ধ। কিন্তু কিছুই করার ছিল না।
বক্তৃতার একটি খসড়া তৈরি করেছিলেন তিনি। এতে তিনি বলতে চেয়েছিলেন- তার ইচ্ছায় নয়, বলপূর্বক তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। কারা এবং কোন বিদেশি শক্তি তার সরকারকে উৎখাত করতে চেয়েছে এটাও তিনি দেশবাসীকে জানাতে চেয়েছিলেন। তার শাসনকালে দেশের কী কী উন্নয়ন হয়েছে তারও বয়ান ছিল।
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় একাধিকবার দাবি করেছেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান মিডিয়ার সামনে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর জানিয়েছিলেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, যদি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে থাকেন, তাহলে সেই পদত্যাগপত্র কোথায়, এর কোনো দালিলিক প্রমাণ রয়েছে কি না, জানেন না কেউই। খোদ রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনও জানেন না শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন কি না। রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন বলে তিনি শুনেছেন। তবে তার কাছে লিখিত কোনো ডকুমেন্ট নেই।
সম্প্রতি মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন এ কথা জানান। সাক্ষাৎকারটি গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন সংস্করণ ‘জনতার চোখ’- এ প্রকাশিত হয়।
জনতার চোখে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার পদত্যাগের দিন বারবার ফোন আসছিল নয়াদিল্লি থেকে। বলা হচ্ছিল, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ঢাকার তরফে দিল্লিকে বলা হয়েছিল- তারা যেন বিমান পাঠিয়ে হাসিনাকে নিয়ে যান। সে অনুরোধে সাড়া দেয়নি দিল্লি। এরপর বাংলাদেশের স্ব-উদ্যোগে বিমানবাহিনীর একটি সি-১৩০ বিমানে তাকে দিল্লি পাঠানো হয়। হাসিনাকে বহনকারী বিমানে আরো দুজন ছিলেন। তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক।