শান্তিগঞ্জের দেখার হাওর সংলগ্ন আস্তমা,আসামপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী উথারিয়া বেরিবাঁধ সহ কয়েকটি বাঁধের নিকটবর্তী মহাসিং নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করার প্রতিবাদে আস্তমা গ্রামবাসী সহ এলাকাবাসী রবিবার ৩০ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দেখার হাওরের উথারিয়া বেরিবাঁধ শান্তিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ সদর,ছাতক ও দোয়ারা বাজার এই চার উপজেলার একমাত্র বোর ফসল রক্ষার জন্য খুবই ঝুকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ বেরিবাঁধ। উক্ত বেরিবাঁধের ভিতর থেকে বিশেষ করে ৫০৪৮ এবং ৫৩০৩ দাগ সহ আশপাশের কয়েকটি বাঁধের কাছ থেকে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নিলে সবগুলো বাঁধ হুমকির মুখে পড়বে এবং আগাম বন্যা আসামাত্র বেরিবাঁধ দশে গিয়ে দেখার হাওর পাড়ের কৃষকের হাজার হাজার হেক্টর স্বপ্নের বোর ফসল পানিতে তলিয়ে যাবে। এই কারণে ৪ টি উপজেলার কৃষকের স্বপ্ন বোর ফসল রক্ষার স্বার্থে ড্রেজার ব্যবসায়ী কর্তৃক বাঁধের নিকটবর্তী নদী থেকে মাটি উত্তোলন বন্ধ করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে জোর দাবী জানান এলাকাবাসী।
৩১শে অক্টোবর ২০২২ তারিখে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাটি উত্তোলনের ঘটনা সত্য। একটি প্রভাবশালী চক্র নিজেদের স্বার্থে মহাসিং নদীতে থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন করায় বাধের কয়েকটি অংশে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। শতকোটি টাকার বাধ হুমকির মুখে।
আস্তমা গ্রামের কৃষক ও সচেতন নাগরিক আজিমুল হক জানান, মহাসিং নদীর দুইপারে হাওরের আমাদের কৃষকের একমাত্র বোরো ফসল রক্ষার জন্য বাধ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একটি প্রভালশালী মহলের সহযোগিতায় ইমরান তালুকদার বাধের পাশ থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন করায় দুপারের বাধ এখন হুমকির মুখে। দুইপাশের যে অংশগুলো ভাঙ্গা দেখা যাচ্ছে, তা একমাত্র ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনের জন্য ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
আস্তমা গ্রামের আরেক কৃষক পরিবারের সন্তান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাসুক আহমদ জানান, ২০১৯ সাল থেকে একটি মহল বাধের পাশ থেকে মাটি উত্তোলনের চেষ্টা করে আসছে, আমরা বাধ রক্ষায় বার বার তাদেরকে বাধা দিয়ে আসছি। বাধ রক্ষার দাবীতে এলাকাবাসী ২০১৯ সালে মানববন্ধন সহ বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসুচি গ্রহণ করেন, আমি প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে গ্রামবাসীর পাশে থেকে বাধ রক্ষার স্বার্থে কাজ করেছি, ভবিষ্যতে গ্রামবাসীর পাশে থাকবো।
তিনি আরো জানান, বাধ রক্ষার দাবীতে আমরা
গত ৩০শে অক্টোবর ২০২২ তারিখে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ প্রদান করেছি।
অভিযোগ জমাদানকালে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রাক্তন প্রভাষক চিত্ররঞ্জন তালুকদার, আস্তমা গ্রামের বিশিষ্ট মুরুব্বী মসুদ মিয়া, মাসুক মিয়া, তাজনুর,লিয়াকত আলী, আব্দুস শাহীদ, জিলিক মিয়া, জমিরুল হক, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাসুক আহমেদ, জয়কলস ইউনিয়নের ০১নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার হাবিবুর রহমান হাবিব, আস্তমা গ্রামের আজিমুল হক,সাজ্জাদ মিয়া, আংগুর মিয়া, আলিম উল্লাহ, জিল্লুল হক, ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আহমেদ সহ আস্তমা গ্রামের সর্বস্তরের জনগণ।
এ ব্যাপারে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন প্রকল্পের ইজারাদার ইমরান তালুকদার জানান, শান্তিগনজ উপজেলায় গৃহিত সরকারি প্রকল্প নবনির্মিত সুনামগঞ্জ ট্রেক্সটাইল ইনস্টিটিউটে মাটি ভরাটের জন্য কার্যাদেশ পাই, সরকারি প্রকল্পে আমি বৈধ কাগজ পত্রের নিমিত্তে সরকারিভাবে অনুমতি পেয়ে মাটি উত্তোলনের প্রস্তুতি নিয়েছি, আমি অবৈধভাবে কোন কিছু করিনি। মহাসিং নদীর চর থেকে ৭(সাত) লক্ষ মাটি উত্তোলনের জন্য আমার কাছে সরকারি অনুমতি আছে। আমি প্রাথমিকভাবে ১(এক) লক্ষ মাটি উত্তোলনের জন্য সরকারি কোষাগার নির্ধারিতহারে রাজস্ব জমা দিয়েছি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বাঁধের কাছ থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনের বিষয়ে গ্রামবাসীর একটি অভিযোগ পেয়েছি, অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে তদন্ত মোতাবেক প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার উজ জামানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।