লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ী ইউনিয়নের অন্তর্গত গিলাবাড়ী (নামাটারী) গ্রামে অবস্থিত পুরাতন জামে মসজিদটি মোঘল আমলে নির্মিত। এই মসজিদটি যুগযুগ ধরে টিকে থাকা দুই সারির মসজিদ আজও মোঘল আমলীয় নির্মাণশৈলীর স্মৃতি বহন করে চলেছে।
ইতিহাসে জানা যায়, ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১২ই জুলাই রাজমহলের যুদ্ধে আবগান সুলতান দাউদ খাঁ করনারি মোগলদের কাছে চুড়ান্তভাবে পরাজিত হলে কার্যত বাংলায় মোগল শাসনের সুত্রপাত ঘটে। ১৫৭৯-১৫৮০ খ্রিস্টাব্দে মোগল শাসন কাঠামোয় বাংলা ‘‘সুবে বাঙ্গলা’’ নামে পরিচিতি পায়। মোগল-সম্রাট আকবরের রাজস্বমন্ত্রী টোডরমল ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে ‘সুবে বাঙ্গলা’ কে ১৯টি সরকার এবং ৬৮৮টি মহালে বিভক্ত করেন। তন্মধ্যে সরকার ঘোড়াঘাট একটি। মোগল আমলে সরকার ঘোড়াঘাট থাকলেও বৃহত্তর রংপুরের উত্তরাঞ্চল মূলতঃ কুচবিহার রাজ্যে বিভক্ত ছিল। কুচবিহার মহারাজা নর নারায়ণের মৃত্যুর পর লক্ষী নারায়ণ ও রঘুদেব নারায়ণের মাঝে বিবাদের সৃষ্টি হলে লক্ষী নারায়ণ মোগল শক্তির সাথে মিত্রতার বন্ধনকে অটুট করতে মোগল সুবাদার মানসিংহের সাথে স্বীয় ভগ্নী প্রভাদেবীর বিবাহ প্রদানের জন্য ১৫৯৬ খ্রিস্টাব্দে প্রস্তাব প্রেরণ করেন এবং সুবাদার মানসিংহ বর্তমান লালমনিরহাট জেলার উপর দিয়ে কুচবিহার গমণকালে সাপ্টিবাড়ী এলাকায় ছাউনি স্থাপন করেন। ধারণা করা হয় মোগলরা এ সময় থেকেই এ অন্ঞল কুচবিহার বা কামরূপ অভিযানের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন। মহারাজা লক্ষী নারায়ণের মৃত্যুর পর মোগলদের সাথে কুচবিহারের সম্পর্কের অবনতি ঘটলে ১৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে মোগল বাহিনী পাঙ্গা আক্রমণ করে পাঙ্গা-রাজ মধুসূদনকে পরাজিত করলে তিনি মোগলদের বশ্যতা স্বীকার করেন। গিলাবাড়ী পুরাতন জামে মসজিদটি মোগল আমলের ১৫৯৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কোন একসময় নির্মিত বলে ধারণা করা হয়।
প্রত্নত্বাতিক নিদর্শন প্রত্যেক জাতির অমূল্য সম্পদ। একটি জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য ও অস্তিত্বের সাথে মিশে থাকা প্রত্নত্বাতিক নিদর্শনগুলো সংরক্ষণে সাংবিধানিক তাগিদ থাকলেও বর্তমানে এলাকার একটি মহল মসজিদটি অপরিকল্পিত সংস্কারের মাধ্যমে এর ঐতিহাসিক গঠন নষ্ট করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন, এমনকি মসজিদটির মূল কাঠামো ভেঙ্গে ফেলারও চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে স্থানীয় সুত্রে জানা যায়।
দেশের মূল্যবান প্রত্নত্বাতিক এ নিদর্শনটি সংরক্ষণের এবং পরিকল্পিতভাবে সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসন সহ প্রত্নত্বাতিক অধিদপ্তরের সুদৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন বলে এলাকার সচেতন মহল মনে করেন।