অনলাইন ডেস্ক:
জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে তুরস্ককে আরো সম্পৃক্ত হতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলিত সাভাসৌগলু ঢাকায় গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর মাধ্যমে তুরস্ককে এ আহ্বান জানান। এদিকে রোহিঙ্গাদের একাংশকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের আগে ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে তুরস্ক। ঢাকা সফরকালে গতকাল তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সমর্থনের কথা জানান।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ঢাকা-নয়াদিল্লি শীর্ষ বৈঠকের পর ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীও ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরে ভারতের সমর্থনের কথা জানান। উল্লেখ্য, জাতিসংঘসহ পশ্চিমা দেশগুলো রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন তুলেছে। তবে বাংলাদেশ জোর দিয়ে বলছে, কক্সবাজারের ওপর রোহিঙ্গাদের চাপ কমাতে এবং রোহিঙ্গাদের তুলনামূলক ভালো জীবন যাপনের ব্যবস্থা করতে তাদের একাংশকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হচ্ছে। এ মাসের প্রথম দিকে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলকে তাদের সম্মতির ভিত্তিতে কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেসসচিব হাসান জাহিদ তুষার জানান, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা করেন। তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের নিজ মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে তুরস্ককে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে আরো বেশি তুর্কি বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন। বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে বিশাল আঞ্চলিক বাজার এবং অভ্যন্তরীণ বাজারের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কেন্দ্রে অবস্থানের কারণে বিশাল বাজার রয়েছে। এখানে বিনিয়োগ করলে উভয়েই লাভবান হবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে তুরস্কের আগ্রহের কথা উল্লেখ করে সাভাসৌগলু বলেন, তুরস্ক বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে মূল্য দেয়। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য যা কিছু করার তাঁর দেশ সেটা করবে। জ্বালানি থেকে পর্যটন সব খাতেই তুরস্ক বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে বলে তিনি জানান।
লেবাননের রাজধানী বৈরুত বন্দরের ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘বিজয়’ মেরামত করে দেওয়ায় তুরস্ককে ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। জবাবে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর মাস মার্চে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান বাংলাদেশ সফর করতে পারেন।
মেভলিত সাভাসৌগলু বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান তারকা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বের কাছে ‘মডেল’। গতকাল বুধবার ঢাকায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ ও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
উল্লেখ্য, দুই দিনের সফরে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় আসেন। গতকাল বুধবার সকালে তিনি ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বিকেলে বারিধারায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনকে নিয়ে তুরস্কের নতুন চ্যান্সারি কমপ্লেক্স উদ্বোধনের পর সন্ধ্যায় ঢাকা ছাড়েন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাভাসৌগলু এক টুইট বার্তায় সাক্ষাতের ছবিসহ লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের শুভেচ্ছা পৌঁছে দিয়েছি। নতুন স্থানে তুরস্কের দূতাবাস স্থাপনে সহযোগিতার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘আতিথেয়তার জন্য আমার ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনকে আমি ধন্যবাদ জানিয়েছি। আমাদের বাণিজ্য ২০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের সম্ভাবনাগুলো পর্যালোচনা করছি।’
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সংবাদ সম্মেলনে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের জন্য বিশাল বোঝা হয়ে এসেছে। এই সংকট সমাধানে তুরস্ক অব্যাহতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাবে। ‘এই বোঝার (রোহিঙ্গা) ভাগ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিতে হবে।’ সাভাসৌগলু বলেন, রোহিঙ্গাদের অবশ্যই স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও সম্মানজনকভাবে তাদের নিজ ভূমিতে ফিরতে হবে। এ ক্ষেত্রে দুই দেশ কাজ করা অব্যাহত রাখবে। শুধু বাহবা নয়, বোঝা ভাগাভাগির জন্য সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ প্রয়োজন—উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু কথাই দেখতে চাই না।’
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে অস্ত্র উৎপাদন ও প্রযুক্তি হস্তান্তরে আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা সব কিছু উৎপাদন করি না। আমরা আমাদের চাহিদার ৭৫ শতাংশ উৎপাদন করছি।’ কভিড-১৯ মহামারি সফলভাবে মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশে তুরস্কের হাসপাতাল নির্মাণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে তিনি বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।