Friday , 22 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ

রোগ নির্মূল আর নিয়ন্ত্রণে সাফল্য বাংলাদেশের

কলেরা, ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েডে বহু মানুষের মৃত্যু হতো। বাংলাদেশ কিছু রোগ নির্মূল করেছে, কিছু রোগ নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

 

বসন্ত ও পোলিও মুক্ত

গুটিবসন্ত একসময় বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ছিল। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্ব থেকে গুটিবসন্ত নির্মূলের উদ্যোগ নেয়। এই উদ্দেশ্যে ১৯৬৬ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত কর্মসূচিও হাতে নেয়।

অবশ্য বৈশ্বিক কর্মসূচির আগে ১৯৬৬ সালে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে) গুটিবসন্তের টিকা দেওয়া শুরু হয়।

১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গুটিবসন্ত নির্মূল কর্মসূচি জোরদার করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল যথাক্রমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল স্মলপক্স ইরাডিকেশন প্রোগ্রাম এবং যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ ও প্রথমার যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিতব্য স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর: বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত বইয়ে বলা হয়েছে, ১ কোটি ১০ লাখ পরিবারে গিয়ে রোগী শনাক্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ জন্য ১২ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রত্যেকের দায়িত্বে ছিল ১ হাজার পরিবারে খোঁজ নেওয়ার। এই সময় ৯২ শতাংশ গ্রাম অনুসন্ধানের আওতায় এসেছিল। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে দেশে ২ লাখ ২৫ হাজার গুটিবসন্তের রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এর মধ্যে মারা যায় ৪৫ হাজার।

বাংলাদেশে শেষ গুটিবসন্তের রোগী ছিলেন ভোলার রহিমা বানু। ১৯৭৫ সালের ১৬ অক্টোবর তাঁর গুটিবসন্ত শনাক্ত হয়। এরপর দেশে গুটিবসন্তের আর কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশকে গুটিবসন্তমুক্ত ঘোষণা করা হয়।

গুটিবসন্তের মতো পোলিও একসময় বাংলাদেশে গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ছিল। পোলিও নির্মূলে দেশব্যাপী টিকা কার্যক্রম জোরদার করে সরকার। ২০০৬ সালে দেশে সবশেষ পোলিও রোগী শনাক্ত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করে।

নিয়ন্ত্রণে বা নির্মূলের কাছাকাছি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ফাইলেরিয়া বা গোদরোগ, কালাজ্বর, ম্যালেরিয়া, কুষ্ঠ, জলাতঙ্ক—এসব রোগ এখন নিয়ন্ত্রণে বা নির্মূলের কাছাকাছি চলে এসেছে বাংলাদেশ।

একসময় ৬৪ জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ থাকলেও এখন আর তা নেই। গত দুই দশকে দ্রুত ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কমে আসতে দেখা গেছে। ম্যালেরিয়া এখন মূলত তিন পার্বত্য জেলাতেই সীমাবদ্ধ। সরকারি হিসাবে, ২০২০ সালে দেশে ম্যালেরিয়ার রোগী ছিল ৬ হাজার ১৩০ জন। এর মধ্যে মারা যায় ৯ জন। ম্যালেরিয়ার জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূল হওয়ার কথা।

একইভাবে সাফল্য এসেছে কালাজ্বর নির্মূলের ক্ষেত্রে। ২০১৭ সালের মধ্যে দেশ থেকে কালাজ্বর নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০১৬ সালেই সেই লক্ষ্য অর্জিত হয়।

একসময় দেশের ১৯টি জেলায় ফাইলেরিয়া বা গোদরোগের প্রকোপ ছিল। বর্তমানে রংপুর ছাড়া অন্য সব জেলা ফাইলেরিয়ামুক্ত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশ থেকে দৃশ্যত কুষ্ঠরোগ নির্মূল হয়েছে। ২০৮৮ সালে ৫ হাজার ২৪৯ জন কুষ্ঠরোগী শনাক্ত হয়েছিল। ২০১৭ সালে তা কমে ৩ হাজার ৭৫৪ জনে দাঁড়ায়।

সরকারের সঠিক নীতি ও পরিকল্পনার কারণে অনেক রোগ নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। সরকারের যেকোনো উদ্যোগকে সফল করতে মানুষ সহায়তা করেছে।

অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা

কুকুরকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে জলাতঙ্ক রোগ নির্মূলের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জলাতঙ্ক রোগে মৃত্যুও কমেছে।

এসব রোগের প্রকোপ যেসব এলাকায় বেশি ছিল, সেখানে পাঁচ দশক ধরে অবহিতকরণ সভা, উঠান বৈঠক, গোলটেবিল বৈঠক, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, পোস্টার, প্রচারপত্র, স্টিকার, বর্ষপঞ্জিকা, মাইকিংয়ের মাধ্যমে সরকার মানুষকে তথ্য ও বার্তা দিয়েছে, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে।

জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি রোগের ক্ষেত্রে জাতীয় কর্মসূচি ছিল বা আছে। এই কর্মসূচিকে সমর্থন দিয়েছে দেশব্যাপী জালের মতো বিছানো স্বাস্থ্য অবকাঠামো। আর প্রতিটি কর্মসূচিতে যুক্ত ছিলেন বা আছেন নিবেদিতপ্রাণ স্বাস্থ্যকর্মীরা। রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি জনসচেতনতা রোগনিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে বড় ভূমিকা রেখেছে।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply