Saturday , 23 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
রোহিঙ্গাদের জন্য বছরে ১০৭০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করছে সরকার
--সংগৃহীত ছবি

রোহিঙ্গাদের জন্য বছরে ১০৭০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করছে সরকার

অনলাইন ডেস্ক:

সীমান্তের শূন্যরেখার ওপারে রোহিঙ্গা শিবিরে গত বৃহস্পতিবার থেকে লড়াই হচ্ছে মূলত রোহিঙ্গাদের দুটি গোষ্ঠী ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)’ ও ‘রোহিঙ্গা স্যালভেশন অর্গানাইজেশনের’ (আরএসও) মধ্যে। গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বিদেশি কূটনীতিক ও বিশ্লেষকদের সামনে এমনটিই জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরো জানান, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে প্রতিবছর ১০০ কোটি ডলারেরও (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা হিসাবে ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা) বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। অথচ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের জন্য এর অর্ধেক অর্থ দিতেই হিমশিম খাচ্ছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা যত দিন এ দেশে থাকবে, তত দিন শেখ হাসিনার সরকার তাদের প্রতি মানবিক সহায়তার দৃষ্টান্ত অব্যাহত রাখবে। কিন্তু আমরা অবশ্যই আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে দেব না। রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে সন্ত্রাসবাদ, মানবপাচার, মাদক চোরাচালান ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে দেখা যাচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে বিদেশি কূটনীতিক, নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের উদ্দেশে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের কেউ কেউ হয়তো জানেন, গত বৃহস্পতিবার যে ঘটনা ঘটেছে (সীমান্তে) তা নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে। কয়েক বছর ধরে আমরা যা জানতাম, পরিস্থিতি আর তেমন নেই। আমরা জানতাম, আরসা রাখাইন রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে (প্রভাব বিস্তার করছে)।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এখন পর্যন্ত যা ঘটছে তা হলো আরসা ও রোহিঙ্গা স্যালভেশন অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে লড়াই। সীমান্তে শূন্যরেখায় ছোট্ট খালের ওপারে মিয়ানমারের অংশে যে শিবির ছিল, তা পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। সেটি এখন আর আরসার নয়, আরএসওর নিয়ন্ত্রণে। এটি একটি বড় ঘটনা।’

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি মোকাবেলায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের হতাহত হওয়ার বিষয়টি তিনি তুলে ধরেন। তিনি আশা করেন, রোহিঙ্গাদের জন্য ‘যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনায় (জেআরপি)’ যে দেশ বা সংস্থাগুলো আছে, অন্তত তারা রোহিঙ্গা শিবিরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পক্ষে কথা বলবে।

উল্লেখ্য, আরসা ও আরএসও—দুটিকেই বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসীগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের অনেকে। মিয়ানমার বাহিনী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাখাইন রাজ্যে বিভিন্ন হামলার জন্য আরসাকে দায়ী করেছে। আরসা সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার বাহিনীর বিরুদ্ধে জোর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিশ্লেষণে বলা হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী গতকালের অনুষ্ঠানে কূটনীতিক ও বিশ্লেষকদের বলেন, ‘আরেকটি বিষয় আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। বাংলাদেশ সরকার প্রতিবছর এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ করছে রোহিঙ্গাদের পেছনে। ২০২১ সালে ১.২ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। বাংলাদেশ যত খরচ করছে তার ৫০ শতাংশেরও জোগান দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হিমশিম খাচ্ছে।’

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘তিন হাজার ডলারেরও কম মাথাপিছু আয়ের একটি দেশ বছরে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করছে নিজের পকেট থেকে। তারা আরো একটু বেশি সহায়তা করবে—এমনটিই আমরা আশা করি।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২২ সালে জেআরপির আওতায় যে অর্থ পাওয়া গেছে, তা খুব আশাব্যঞ্জক নয়। শিগগিরই বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একসঙ্গে বসে ২০২৩ সালের জেআরপি তুলে ধরবে।

রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, টেকসই সমাধানের জন্য সরকার দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্মরণ করিয়ে দেন, এই সংকটের উৎস মিয়ানমার। সমাধানও মিয়ানমারে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। যদিও প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারবিষয়ক একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, এর পরও পরিস্থিতির তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়াকে তিনি দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply