ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি:
দিন এনে দিন খান। চাকা না ঘুরলে চলে না সংসার। জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। দুই পায়ের ঘোড়ালি পর্যন্ত বাঁকা, হাতও অচল। চলাফেরা করেন পা বাঁকা করে। তবুও থেমে নেই জীবন। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে চলছে প্রতিবন্ধী জামালের সংসার। বাবা-মা ও পাঁচ ভাইবোন নিয়ে জামালের সংসার। ভাইবোনের মধ্যে জামাল মধ্যম। জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী হওয়ায় বহু সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। গরিব ও কৃষক পরিবারে জন্ম নেয়ার স্কুলের গণ্ডিতে পা দিতে পারেননি জামাল।
শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী জামাল। সে বিজয়নগরের আব্দুল্লাহপুরের চান মিয়ার ছেলে। জামালের বাম হাত-পা জন্মগত ভাবে বিকলাঙ্গ। জীবিকা নির্বাহের জন্য ডান হাত-পা দিয়ে রিকশা চালিয়ে চলছে তার সংসার। প্রতিবন্ধী হয়েও সে কর্ম করে বেঁচে থাকতে চাই।
যে বয়সে নাতি-নাতনিদের সঙ্গে হাসি-খুশিতে সময় কাটানোর কথা, সেই বয়সে রিকশা চালাচ্ছেন তিনি। তাও আবার এক হাত ও পা বিকলাঙ্গ। এভাবেই প্রায় ৩২ বছর ধরে জীবিকার সন্ধানে রিকশা চালাচ্ছেন জামাল।
জানা গেছে, জামালের ৫ পাঁচ ভাই ও ২ ছেলে সন্তান রয়েছে। তারাই কেউ বেকার না। সবাই কর্ম ব্যস্ততার মাধ্যমে দিন পাড় করছেন। দুই ছেলে থাকা সত্ত্বেও এখনো তাকে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে। দীর্ঘ দিন এভাবেই পরিশ্রম করতে করতে বর্তমানে নানা রোগে আক্রান্ত তিনি। তাই নিয়মিত কাজ করতে পারেন না। তারপরও জীবিকার তাগিদে তাকে বের হতে হয়।
জীবনযুদ্ধে হার না মানা জামাল জানান, জন্মগত ভাবে এক পা ও হাত বিকলাঙ্গ। সেই থেকেই জীবনে নেমে আসে জীবনের কালো অধ্যায়। কৃষক বাবার সাধ্য অনুয়ায়ী ডাক্তার ও কবিরাজকে দিয়ে চিকিৎসা করে ছিলেন। কিন্তু তাতেও কোন উপকার আসেনি।
তিনি আরো জানান, তখন থেকে ভাইদের ও বাবার সঙ্গে টুকটাক কাজ করি। পরে বিয়ে করি। বিয়ের বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর কিছু দিন পরে মা ও মারা যান।
ঘরে বউ ও সন্তানদের নিয়ে কোনোরকম খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছিল। জমি-জমা না থাকায় রিকশা চালানো শুরু করি। এক হাত ও পা অচল হওয়ায় না অনেক যাত্রী রিকশায় উঠতো না। অনেক কষ্ট করে সংসারসহ দুই ছেলেকে বড় করেছি। তারাও এখন কাজ করেন। তারপরও রিকশা চালাতে হয়।
সাংবাদিক সুমন রায় জানান, প্রায়ই জামালকে রিকশা চালাতে দেখি। হঠাৎ-আসে হঠাৎ চলে যায়। জামাল খুব পরশ্রমী। খুব কষ্ট করে সংসার নিয়ে বেঁচে আছে। সবাই এগিয়ে আসলে হয়তো জামাল আরও ভাল থাকতে পারবে।