অনলাইন ডেস্ক:
রাশিয়াকে কোণঠাসা করতে আগ্রাসী ধরনের কৌশলগত পরিকল্পনা নিচ্ছে পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো। রুমানিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক শেষে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে বুধবার বলকান অঞ্চল এবং কৃষ্ণ সাগরের তীরে মিত্র দেশ খোঁজার পাশাপাশি নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
ন্যাটো জোট বলেছে, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর নিজেদের সংহতি বৃদ্ধি করতে তারা নতুন করে ভাবছে।
রুমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে দুই দিনব্যাপী ওই বৈঠক বুধবার শেষ হয়েছে।
বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ইউরোপের বলকান অঞ্চলের উত্তরের এবং কৃষ্ণ সাগর তীরবর্তী অঞ্চল ন্যাটোর জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তাত্পর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বিবৃতিতে ২০০৮ সালে রুমানিয়াতেই অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে গৃহীত ‘উন্মুক্ত দ্বার নীতি’ প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘আমরা অবশ্যই উন্মুক্ত দ্বার নীতি অনুযায়ী গৃহীত প্রতিশ্রুতিতে অবিচল থাকব। ’
জোটে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার প্রশ্নে ওই নীতি বেশ তাত্পর্যপূর্ণ। ন্যাটোর আর্টিকেল-১০ অনুযায়ী গৃহীত ওই নীতিতে বলা হয়েছে, ইউরো-আটলান্টিক অঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষায় ইচ্ছুক যেকোনো ইউরোপীয় দেশ ন্যাটোতে যোগ দিতে পারে। ওই সম্মেলনেই প্রথমবারের মতো ন্যাটো ঘোষণা দেয়, জর্জিয়া ও ইউক্রেন ভবিষ্যতে এর অন্তর্ভুক্ত হবে।
বুখারেস্ট বৈঠকে ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ জানান, ‘রাশিয়ার চাপের মুখে থাকা’ দেশ জর্জিয়া, মলদোভা ও বসনিয়া-হার্জেগোভিনার সঙ্গে ন্যাটো আলোচনা করবে। স্টলটেনবার্গ বলেন, স্বাধীনতা রক্ষা করতে এবং ‘প্রতিরক্ষার সক্ষমতা শক্তিশালী করতে’ এসব দেশকে সহায়তা করার জন্য আরো পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
সেই সঙ্গে ন্যাটো মহাসচিব আবারও বলেন, ইউক্রেন একদিন ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত হবে।
জোটের মহাসচিবের মতো ন্যাটোর প্রভাবশালী সদস্য দেশের মন্ত্রীরাও আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রশ্নে জোটের অবস্থান পুনর্বিন্যস্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি বলেন, ‘পশ্চিম বলকানের সব দেশ এবং ইউক্রেনের নিকটবর্তী দেশগুলোকে রক্ষা করা প্রয়োজন। কারণ এই মুহূর্তে একসঙ্গে কাজ করায় জোর দিতে হবে। ঐক্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি রাশিয়ার জন্য কড়া বার্তা। ’
২০০৮ সালে ন্যাটোর উন্মুক্ত দ্বার নীতি অনুযায়ী জর্জিয়া ও ইউক্রেনকে সদস্য হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হলে রাশিয়া তাতে কড়া আপত্তি জানিয়েছিল। ন্যাটোর সদস্য হওয়ার বিষয়ে পশ্চিমমুখী ইউক্রেনের আগ্রহই দেশটিতে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রধান কারণ।
বুধবার ন্যাটোর পক্ষ থেকে জর্জিয়ার সঙ্গেও ‘সম্পর্কোন্নয়নের’ কথা বলা হয়েছে, যা রাশিয়ার জন্য আরেক আপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের ন্যাটোভুক্তিও মানতে চায় না মস্কো। দেশদুটি এরই মধ্যে জোটের সদস্যপদের আবেদন করেছে। রাশিয়া মনে করে, ন্যাটোর পূর্বদিকে সম্প্রসারণ তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর মস্কোর নেতৃত্বাধীন ‘ওয়ারশ প্যাক্ট’ বিলুপ্ত হয়। ওয়ারশ জোটে থাকা পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশ ধীরে ধীরে ন্যাটোর সদস্যপদ গ্রহণ করে। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত আটবার জোটটির সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ উত্তর মেসিডোনিয়াকে ২০২০ সালে যুক্ত করে নেওয়া হয়।
সূত্র : ডয়চে ভেলে, বিবিসি