একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মাত্র ১৩ সেকেন্ডের সেই ভিডিও দেখলে গা শিউরে ওঠে। ফুটপাতের পাশে রিকশার আড়ালে এক নারী ও এক পুরুষ আতঙ্কে সরে যাচ্ছেন, আর তাদের ওপর নির্দয়ভাবে রামদার কোপ বসাচ্ছে দুই যুবক। আশপাশে লোকজন থাকলেও কেউ এগিয়ে আসছে না। কেউ সাহায্য করছে না।
ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর সড়কে। রাত তখন ৯টা। এটি কোনো গভীর রাতের ঘটনা নয়, যখন রাস্তায় কেউ থাকে না।
তবু চারপাশের লোকজন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। আরেকজনকে নির্মমভাবে কোপাতে দেখেও কেউ কিছু বলেনি, এগিয়ে আসেনি।এ ধরনের ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা কি নিরাপদ? রাতের শহরে, এমনকি দিনের আলোতেও, আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? কেন সাধারণ মানুষ অন্যের বিপদে এগিয়ে আসে না? কারণ কি ভয়? নাকি দায়িত্বহীনতা? নাকি ‘নিজের জীবন আগে’ এই মানসিকতা? সমাজ কি তাহলে ভীতুর জাতিতে পরিণত হচ্ছে?
আমরা প্রায়ই দেখি, কেউ বিপদে পড়লে তার সাহায্যে এগিয়ে আসার পরিবর্তে মানুষ মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ কি কেবল কৌতূহল, নাকি আমাদের মানবিক অনুভূতি লোপ পাচ্ছে? আজ যে বিপদে পড়ছে, সে যদি আমাদের প্রিয়জন হতো? তাহলে কি আমরা এভাবে নীরব থাকতাম? কিন্তু এই পরিস্থিতি কি পরিবর্তন করা সম্ভব? অবশ্যই সম্ভব।
পরিবর্তন আনতে হলে প্রথমে আমাদের সচেতন হতে হবে। নিজের ও অন্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সমাজের প্রতিটি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। নিরাপত্তা কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব নয়, এটি সমাজেরও দায়িত্ব।
প্রথমত, জনগণের মধ্যে সাহস ও দায়িত্ববোধ তৈরি করতে হবে। যদি একা এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না হয়, তবে একসঙ্গে উদ্যোগ নিতে হবে।
কেউ অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে, পুলিশকে দ্রুত খবর দিতে হবে। সবার অংশগ্রহণ ছাড়া সমাজ নিরাপদ হতে পারে না।
দ্বিতীয়ত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে। রাতে টহল বাড়ানো, সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং দ্রুত পুলিশি সাড়া নিশ্চিত করা অপরিহার্য। যেকোনো অপরাধের দ্রুত ও কার্যকর বিচার অপরাধীদের নিরুৎসাহিত করবে।
তৃতীয়ত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে হবে। যারা নির্দোষ মানুষদের আক্রমণ করছে, তাদের মুখোশ উন্মোচন করা দরকার। পাশাপাশি, মানুষের মনে যেন অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস জন্মায়, সে দিকেও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
এভাবে যদি আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করি, তবে রাত হোক বা দিন—সব সময়ই আমরা নিরাপদ থাকব। একা থাকলে ভয় পেতে হয়, কিন্তু সমাজ এক হলে, ভয়ও পালাবে। আমাদের শহর, আমাদের পথঘাট নিরাপদ করতে হলে, আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। নইলে আজ যারা আক্রান্ত, আগামীকাল তাদের জায়গায় আমরা বা আমাদের প্রিয়জনও থাকতে পারি।