স্টাফ রিপোর্টার (রাজশাহী):
রাজশাহীর বাঘমারা থানার ওসির দাপটে রাত ৮টার পর থেকে ভোর পযর্ন্ত কৃষি জমিতে চলছে একের পর এক পুকুর খনন। শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দুই দিন দিনরাত পুরো দমে চলে খননের কাজ এতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। খনন করা মাটিও বিক্রি করা হচ্ছে আশেপাশের ইটভাটায় ও পল্ট ব্যবসায়িদের কাছে, আর মাটি পরিবহনের সময় ট্রাক্টরের চাকায় নষ্ট হচ্ছে গ্রামিণ রাস্তা গুলো।
গোবিন্দ পাড়া ইউনিয়নের রুহিয়া গ্রামে পুকুর খননের তথ্য প্রশাসন কে দেওয়ার জেরধরে দৈনিক জনতার ইশতেহার পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক মুকুল হোসেন কে ভুমি খেকো এন্দাদুল হক ও তার লাঠিয়াল বাহিনীর হাতে সাংবাদিক মুকুল হোসেন মারধরের শিকার হয়। মারধরের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠে।
অন্যদিকে একটি সুনাম ধন্য রাজধানী অনলাইন টিভিতে পুকুর খননের খবর প্রচার হওয়ায় অনলাইন টিভির স্টাফ রিপোর্টার ও বাঘমারা মডেল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলমকে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়েছে সেই ভুমি খেকো এন্দাদুল হক। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বাঘমারা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন, কিন্তু সাংবাদিক খোরশেদ আলম জানান, এখন পযর্ন্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি থানা পুলিশ।
কৃষকদের লিখিত অভিযোগও কোন কাজে আসছে না। কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না পুকুর খননের কাজ। এলাকায় একের পর এক পুকুর খননের কারণে ফসলের মাঠে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এতে কমছে ফসল উৎপাদন, আর এই অবৈধ পুকুর খননের টাকায় পকেট ভরছে থানার ওসি অরবিন্দ রায়ের।
বাঘমারা উপজেলায় কয়েকটি ইউনিয়ন জুড়ে চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না,কিন্তু এই নির্দেশনা উপেক্ষা করেই কৃষিজমি পরিণত করা হচ্ছে পুকুরে। ফলে কৃষককে হারাতে হচ্ছে কৃষি জমি। এতে করে কৃষির ওপর চাপও বাড়ছে বলে মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
শুধু তাই নয়, বিশেষজ্ঞদের দাবি দ্রুত পুকুর খননের কাজ বন্ধ করা না গেলে বাঘমারা সহ আশেপাশের কয়েকটি উপজেলার কৃষিজমি শূন্যের কোটায় দাঁড়াবে। এতে পুরো উত্তরাঞ্চল কৃষিতে হুমকির মুখে পড়বে। যার প্রভাব পড়বে পুরো দেশের উপর। যার কারণে দ্রুত পুকুর খননের কাজ বন্ধ করতে হবে।
বেশ কিছু স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, মোটা অংকের টাকা নিয়ে তিন বা চার ফসলি কৃষি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খননের মৌখিক অনুমতি দিচ্ছেন বাঘমারা থানার ওসি অরবিন্দ রায়। আমারা থানায় পুকুর খনন বন্ধ করার জন্য অভিযোগ দিলেও কোন কাজ হয়নি।
জমিতে পুকুরখননের সিন্ডিকেট চক্র শক্তিশালী ভাবে কাজ করছে। ওই চক্রকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে কৃষিজমিতে পুকুরখননের কাজ করানোর সুযোগ করে দিছে থানার ওসি অরবিন্দ রায়।
সরেজমিনে দেখতে গেলে ভেকুগাড়ীর ড্রাইভার নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, গাড়ি ভেঙ্গে দিবে বলেতো আমাদের ভয় আছে, একটা গাড়ির দাম লক্ষ লক্ষ টাকা। ওসি স্যারের কাছ থেকে অনুমতি নেয়া হয়েছে বলে আমরা নির্ভয়ে কাজ করছি। এ সময় ড্রাইভার আরো জানান, পুকুর খনন কারি আমাদের মালিক মোঃ দুলাল কে বলেছে স্থানীয় যে নেতা এবং সাংবাদিক যাই আসুক আমার কথা বলবে। কোন সমস্যা নেই।
এদিকে এই পুকুর খননের সঙ্গে জড়িত, মোস্তাক নামের এক ব্যক্তি দুবিলা বিলে পুকুরে অবস্থান করছিল। তিনি নিজেকে পুলিশ পরিচয় দেয় সন্দেহ হলে তার কর্মস্থান কোথায় জানতে চাইলে তিনি পুকুর থেকে পালিয়ে যান।
তথ্য অনুসন্ধানে সরেজমিনে গনি পুর ইউনিয়ন ৩নং ওয়ার্ডে দুবিলা বিলে ও পাশের আরেকটি শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন বিলে, এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার পুকুর খননকারি মোঃ দুলাল ওসি সাহেবের প্রভাব খাটিয়ে প্রকাশ্যে কৃষি জমিতে দিনরাত পুকুর খননের কাজ করে যাচ্ছে। স্থানীয়রা খনন কারিদের বিরুদ্ধে ডিউটি রত পুলিশ এলাকায় আসলে তাদের কাছেও অভিযোগ দিয়ে কোন কাজে আসছে না। পুকুর খননকারি মোঃ দুলাল এর কাছে পুকুর খননের সরকারি অনুমতির কোনো কাগজপত্র আছে কিনা জানতে চাইলে সাংবাদিকদের সামনে পুকুর খননকারি দুলাল বক্তব্যে অনেকটাই প্রকাশ করে বলেন, আমার পুকুর খনন করা জাতীয় ব্যবসা আমি কাকে কি ভাবে ম্যানেজ করে পুকুর খনন করতে হয় সেটা আমি ভালো ভাবে জানি, পুকুর খননের অনুমতির কাগজপত্র শুধু আমি কেন কাউকেই দেয় না। আর আমাদের এই বিল এতো ভিতরে এসিল্যান্ড স্যার এখানে আসেনা, তাই ওসি স্যার কে বিঘা প্রতি মোটা অংকের কিছু সালামী দিয়ে খনন কাজ শুরু করেছি যেহেতু স্থানীয় থানা পুলিশ এই খননের কাজে সহযোগিতা করছে তাহলে স্থানীয় কৃষক, বা যেকোনো নেতা কিংবা সাংবাদিক কাউকে কি আর করার সময় নাই, তাছাড়া আমার পুকুর খননের কাজে কেউ বাধা দিচ্ছে কি না ওসি স্যার আমার ফোনে ফোন দিয়ে খোঁজ খবর রাখে। দুলালের এই বক্তব্য টির রেকর্ড মিডিয়ার কাছে সংরক্ষণ আছে।
ঐ বিলে আরেক ব্যাক্তি, দিঘি পাড়ার আব্বাস আলীর ছেলে সহিদুল মাষ্টার ৮০ বিঘার একটি পুকুর খননের কাজ করছে তিন ফসলি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খননের কাজ করছে। খননের বিষয়ে সহিদুল মাষ্টারের সাক্ষাৎকার নিতে গেলে তিনি পুকুর থেকে পালিয়ে যান।
এদিকে বাঘমারা আক্কেল পুর এলাকার আচিন মাদ্রাসার সভাপতি বলো মলবি নামের এক ব্যক্তি দুবিলা বিলে দুটি পুকুর খনন করছে যার পরিমাণ দুটো মিলে প্রায় ১৪০ বিঘা তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন করার অনুমতি কে দিয়েছে এবং কোন কাগজপত্র আছে কি না তার সাক্ষাৎকার নিতে গেলে তাকে পুকুরের পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোন ০১৭১৬ ০৭৭ ১৩০ নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি শশুর বাড়ি আছি, প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার জন্য মামুন নামের এক ছেলেকে দায়িত্ব দেওয়া আছে বলে ফোন কেটে দেয়। শুভডাঙ্গা এলাকার একটি সচেতন মহল বলছে, আমরা কৃষি দেশের মানুষ আমাদের এলাকার জনগণের একটা বিশাল অংশ জীবন ধারণের জন্য কৃষির উপর নির্ভরশীল। আমাদের কে বছরে তিন বার ধান উৎপাদন করতে হয়, তাছাড়া সরিষা গম ভুট্টা কাচা শাক সবজি তো আছেই এই পুকুর খননের কারণে পুকুরের পাশের জমি গুলোতে কোমর পযর্ন্ত জলাবদ্ধতা হয়ে থাকে। জমিতে যা কিছু ফসল থাকে সেগুলো পানির নিচে পচে যায় তাহলে কৃষক কি ভাবে বাচবে, এই ওসি যোগদান করার পর থেকে বেশি পুকুর খনন করা শুরু হয়েছে, বাঘমারা থানার ওসির কাছে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা না নিয়ে পুকুর খননকারিদের কাছ থেকে বখরা লেনদেন করে, দায়িত্বে থাকা প্রশাসন অর্থের কাছে বিক্রি হলে অবৈধ ভাবে পুকুর খনন বন্ধ হবে কি ভাবে। প্রতিবেদনটি লেখার সময় ওসি অরবিন্দ রায় এর
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।