অনলাইন ডেস্ক:
করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় দফায় এবার ঢাকা মহানগরীর ১৯টি থানা এলাকায় শনাক্ত হার ৩১ শতাংশের ওপরে বা সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বলে দুই দিন আগেই তথ্য প্রকাশ করেছে আইইডিসিআর। গণমাধ্যম এ তথ্য প্রচারের পর এসব এলাকার মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হলেও জীবনযাত্রায় খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। অন্যদিকে গত বছরের মতো উচ্চঝুঁকির এলাকাগুলোতে যে ধরনের ‘লকডাউন’ ব্যবস্থা করা হয়েছিল তা-ও হয়নি এখনো। অন্যদিকে এলাকার অনেকেই জানে না ঠিক তাদের কোন কোন প্রতিবেশী বা কোন কোন বাসাবাড়িতে করোনায় আক্রান্ত মানুষ আছে।
এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকেও গত বছরের মতো কন্টাক্ট ট্রেসিং (রোগীর সংস্পর্শে কারা এসেছে তা খোঁজা) বা কমিউনিটিভিত্তিক আইসোলেশনেরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্য থেকে বলা হয়েছে, আগামী সাত দিন যে সর্বাত্মক লকডাউন থাকবে তাতে ওই উচ্চ সংক্রমণের এলাকাগুলোতেও একই প্রভাব পড়বে, ফলে গত বছরের মতো আলাদা কোনো প্রতিবন্ধকতা বা ঘরে ঘরে পরীক্ষার মতো কোনো উদ্যোগের পরিকল্পনা নেই। তবে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিভিল সার্জনের সমন্বয়ের মাধ্যমে এলাকায় এলাকায় প্রয়োজনীয় সামাজিক সচেতনতা ও সহায়তামূলক কাজ চলবে বলে জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে।
আইইডিসিআরের তথ্য অনুসারে সর্বোচ্চ শনাক্ত হার থাকা থানাগুলো হচ্ছে রূপনগর, আদাবর, শাহ আলী, রামপুরা, তুরাগ, মিরপুর, কলাবাগান, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, মুগদা, গেণ্ডারিয়া, ধানমণ্ডি, হাজারীবাগ, নিউ মার্কেট, চকবাজার, সবুজবাগ, মতিঝিল, দারুসসালাম ও খিলগাঁও।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল হাসান বলেন, ‘উচ্চ সংক্রমণ বা শনাক্তকৃত এলাকার জন্য এবার আলাদা করে কোনো জোনিং সিস্টেম হচ্ছে না। তবে আইইডিসিআর থেকে নিয়মিত কন্টাক্ট ট্রেসিং করা হচ্ছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ রাখছি, তাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেসব ব্যাপারে সমন্বয় করা হচ্ছে।’ আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘আমরা যেসব এলাকায় উচ্চমাত্রার সংক্রমণ বা শনাক্ত পাচ্ছি সেই এলাকাগুলোতে কন্টাক্ট ট্রেসিং করছি। যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের সঙ্গে কথা বলে যারা যাদের সংস্পর্শে ছিল তাদের ঠিকানা বা ফোন নম্বর নিয়ে তাদের সঙ্গেও কথা বলে তাদেরকে কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। সেই সঙ্গে নিয়মিত তাদের মনিটরিং হচ্ছে। কারো উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং প্রয়োজেন হাসপাতালের যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’ ঢাকার সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, ‘গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি ঢাকায় যেভাবে ঘনবসতি তাতে এলাকাভিত্তিক লকডাউন বা বাড়তি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় আশানুরূপ সাফল্য আসে না। এ ছাড়া পুরো কার্যক্রমটি বাস্তবায়নও অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়ে ঢাকার অবকাঠামোগত জন চলাচল পদ্ধতির কারণে।’
আইইডিসিআরের সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ১৪ হাজার ৩৩২টি নমুনা পরীক্ষায় পাঁচ হাজার ১০৩ জন (শনাক্তের হার ৩৬ শতাংশ) ও ঢাকা উত্তরের ৩৬ হাজার ৭৭১টি নমুনা পরীক্ষায় ১০ হাজার ৮৪৩ জন শনাক্ত হয়েছে (শনাক্ত হার ২৯ শতাংশ)। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ রূপনগর (৪৬ শতাংশ) ও আদাবর (৪৪ শতাংশ) এলাকা। আরো ১৭টি থানার শনাক্ত হার ৩০ শতাংশের ওপরে, ২৩টি থানার ২০ শতাংশের ওপরে ও সাতটি থানায় ১১ শতাংশের ওপরে। শনাক্ত হার ১১-২০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে তেজগাঁও, উত্তরা পশ্চিম থানা, ভাষানটেক, গুলশান, ক্যান্টনমেন্ট, তেজগাঁও শিল্প এলাকা ও বিমানবন্দর থানা এলাকা। ২১-৩০ শতাংশ শনাক্ত হার রয়েছে শাহবাগ, বংশাল, লালবাগ, শাহজাদপুর, রমনা, কামরাঙ্গীরচর, শ্যামপুর, বাড্ডা, বনানী, উত্তরখান, শেরেবাংলানগর, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, পল্লবী, কাফরুল, ডেমরা, ওয়ারী, ভাটারা, দক্ষিণখান, খিলক্ষেত, কদমতলী, উত্তরা পূর্ব থানা ও পল্টন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশন থেকে নির্দেশনা পেয়েছি। সেই মোতাবেক আমরা কাজ করব। আমাদের বাজারগুলোকে আমরা রাস্তায় নিয়ে আসব। দোকানপাট সময়মতো বন্ধ করব। এলাকা পরিদর্শনে টিম করে দিয়েছি।’
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, ‘আমরা এলাকায় মাইকিং করেছি, প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে নিষেধ করেছি। এ ছাড়া ১৪ এপ্রিল থেকে আমাদের নিজস্ব পরিষেবা কর্মীরা মাঠে থাকবে, তারা সরকারি নির্দেশনা সবাই মানছে কি না তা তদারক করবে।’
ডিএসসিসির ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর খ ম মামুন রশিদ শুভ্র বলেন, ‘আমার এলাকায় ঘনবসতি অনেক বেশি। ফলে জরুরি পরিস্থিতিতে সব কিছু সামাল দেওয়া একটু কঠিন হয়ে পড়ে। তার পরও আমরা চেষ্টা করব সরকারি নির্দেশনা কার্যকর করতে। আমাদের মাস্ক বিতরণ কার্যক্রম চলবে।’