এখন কারাগারকে সংশোধনাগারে পরিণত করতে উন্মুক্ত ও মেট্রোপলিটন নামে নতুন কারাগার চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক বলেন, ‘জেলখানায় থাকা বন্দিরা আমাদের কারো ভাই, বন্ধু বা স্বজন। তাদের ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে সরকার উন্মুক্ত কারাগার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এখানে বন্দিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে।
নতুন আইন অনুযায়ী, কয়েদিদের সন্তানদের বিবাহ, জন্মদিনসহ পরিবারের বিশেষ অনুষ্ঠানে ছুটি পাবেন কারাবন্দিরা। একই সঙ্গে সমাজে পুনর্বাসন ও পুনরঙ্গীভূতকরণের উদ্দেশ্যে কারাবন্দিদের প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হবে। কোনো বন্দির সাজার মেয়াদ পূর্ণ হলে সরকারি ছুটির দিনের পূর্বের দিন মুক্তি পাবেন।
নতুন আইনে উন্মুক্ত ও মেট্রোপলিটন কারাগার নামে দুই শ্রেণির নতুন কারাগার চালু করছে সরকার। এ জন্য বাংলাদেশ কারা ও সংশোধন পরিষেবা আইন ২০২৩-এর খসড়া তৈরি করেছে সুরক্ষাসেবা বিভাগ। এই আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদন হলে ব্রিটিশ আমলের আইন দ্য প্রিজন্স অ্যাক্ট ১৯৯৪ এবং দ্য প্রিজনার্স অ্যাক্ট ১৯০০ আইন দুটি বাতিল করা হবে। নতুন এই আইনের বিষয়ে জনগণের মতামতও নিয়েছে সুরক্ষা সেবা বিভাগ। এখন এই মতামত যাচাই-বাছাই শেষে আইনটির খসড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
এ বিষয়ে সাবেক কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের দেশে বন্দিরসংখ্যা অনেক বেশি। বন্দিদের এ সুবিধা চালু হলে কারাগারের জন্য ভালো হবে। সন্তানদের বিশেষ দিনে বন্দিদের ছুটি দেওয়া হলে শিশুদের মানসিক বিকাশ ভালো থাকবে। এ ছাড়া কারাগারকে বন্দিশালা নয়, বরং সংশোধানাগার হিসেবে পরিবর্তনের জন্য এ আইন তৈরি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে সহজে বড় অপরাধীদের এই সুবিধা দেওয়া যাবে না। উন্মুক্ত কারাগার ও প্যারোলে মুক্তির বন্দিদের যথাযথভাবে তদারক করতে হবে।’
ইফতেখার উদ্দিন বলেন, জনবলসহ কারাগারের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, সেগুলো সমাধান করতে হবে। বিশেষ করে জেলা পর্যায়ে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের মর্যাদা ও সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। কারা স্টাফদের মানসিকতা পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, নিকটাত্মীয়ের মৃত্যু, সন্তানের বিবাহ ইত্যাদি কারণে বন্দির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কারা কর্তৃপক্ষের সুপারিশের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বন্দির ছুটি মঞ্জুর করতে পারবেন। এ মুক্ত অবস্থা অতিবাহিত করার সময় সংশ্লিষ্ট বন্দির কারাবাস হিসেবে গণ্য হবে। তবে নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুর কারণে আগে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হতো।
কয়েদিদের আচরণ ভালো হলে দণ্ডের অর্ধেক মাফ
নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, সমাজে পুনর্বাসন ও পুনরঙ্গীভূতকরণের উদ্দেশ্যে বন্দিকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হবে। প্যারোলে মুক্তির জন্য মোট কারাদণ্ডের অর্ধেক সময় অতিবাহিত করতে হবে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১৫ বছর অতিবাহিত হলে প্যারোলের জন্য আবেদন করতে পারবে। প্যারোলে মুক্তির অতিবাহিত সময় বন্দির কারাবাস হিসেবে গণ্য হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক প্যারোল কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
কারা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, যে বন্দি ১০ বছরের মধ্যে ৮ থেকে ৯ বছর সাজা ভোগ করেছেন, তাঁকে প্রশিক্ষণ শেষে বাইরে কাজ করার সুযোগ দিলে পালানোর সম্ভাবনা কম। কারণ পুনরায় গ্রেপ্তার হলে তাঁকে আরো বেশি সাজা ভোগ করতে হবে। অর্ধেক সাজা ভোগ করা বন্দিদের এভাবে উন্মুক্ত কারাগারে নিয়ে প্রশিক্ষণ শেষে কাজের সুযোগ দেওয়া হলে অন্য বন্দিরাও ভালোভাবে চলবে। কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হবে না। কারণ রেকর্ড ভালো থাকলে উন্মুক্ত কারাগারে যেতে পারবে। এ ছাড়া কারাগারগুলোতে বাড়তি বন্দিও থাকবে না।
এ বিষয়ে সুরক্ষা সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব (কারা অনুবিভাগ) জিয়াউল হক বলেন, কারাগারকে আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সংস্কারের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারাগারকে বন্দিশালা নয় বরং সংশোধনাগারে পরিবর্তন ও সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, জনমত যাচাইয়ের পর আইনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।
জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব
ভূমি অফিস উন্মুক্ত কারাগারের জন্য জমি বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু কক্সবাজার বন বিভাগের পক্ষ থেকে বন্দোবস্ত বাতিলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং বন অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপর কক্সবাজার জেলা কারাগার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা সুরক্ষা সেবা বিভাগে সচিবকে বিষয়টি জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এ বিষয়ে শিগগির দুই মন্ত্রণালয়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আশা করা হচ্ছে, আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে।