বিভিন্ন কারখানা ও ক্যান্টনমেন্টে মালি বা বাবুর্চির কাজ দেওয়ার কথা বলে তরুণদের পাঠানো হয় রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে। এমন তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বব ফেসবুকে একটি বিজ্ঞাপন দেয় ড্রিম হোম ট্রাভেলস। এতে বলা হয়, রাশিয়ায় ক্যান্টনমেন্টে মালি ও বাবুর্চির কাজের সুযোগ রয়েছে।
বেতন শুরু দেড় হাজার ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার তথ্যও তুলে ধরা হয় এতে।ফেসবুকে চটকদার বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে স্থানীয় দালালদেরও কাজে লাগিয়ে দেয় ড্রিম হোম ট্রাভেলস। দালালরা উন্নত জীবনের আশ্বাস দিয়ে নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করে তরুণদের।
সরল মনে তা বিশ্বাস করেন কলেজপড়ুয়া আরমানসহ অন্যরা। বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় দালালরা এই তরুণদের ঢাকায় ট্রাভেল এজেন্সির অফিসে নিয়ে আসে। একেকজন থেকে নেওয়া হয় আট লাখ টাকা করে।আরমান জানান, তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা চুক্তি করে ড্রিম হোম ট্রাভেলস।
তিনিসহ ১০ জন তরুণকে প্রথমে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরবে পাঠায় ড্রিম হোম ট্রাভেল। সেখান থেকে তাঁদের বিক্রি করে দেওয়া হয় রাশিয়ান একটি চক্রের কাছে। রাশিয়ায় পৌঁছানোর পর তাঁদের এক মাসব্যাপী কমান্ডো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কৌশলে দুজন দেশে ফিরে আসতে সমর্থ হলেও ফেঁসে যান বাকি আটজন। তাঁদের জোরপূর্বক মারধর করে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়।
আরমান বলেন, ‘আমরা বারবার তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে আমাদের কর্মী ভিসায় পাঠানো হয়েছে। আমরা কোনো যুদ্ধে অংশ নিতে চাই না। এর পরও আমাদের যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়। রাশিয়ান কমান্ডোরা মারধর করে আমাদের যুদ্ধে নিয়ে যায়। আমাদের সামরিক পোশাক পরিয়ে হাতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ তুলে দেওয়া হয়। কিয়েভে ড্রোন হামলা ও স্থলমাইন বিস্ফোরণ হলে আমার সামনে থাকা জিপে আটজনই প্রাণ হারান। আমি পেছনে মোটরসাইকেলে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাই। আমি এখন দেশে ফিরতে চাই।’
পাসপোর্টে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আরমানের জন্ম ২০০২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। রাশিয়ায় প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে যে সৈনিক নম্বর দেওয়া হয়েছে, তার একটি ছবিও পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত ছবিতে দেখা গেছে, তাঁর আইডি নম্বর এ৫-১৯৭০৫৯।