আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক পরাশক্তিগুলোর মধ্যে যারা এ দেশের নির্বাচন নিয়ে অতিরিক্ত আগ্রহ দেখাচ্ছে, তাদের আসল উদ্দেশ্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নয়। তারা মূলত অর্থনৈতিক ও সামরিক উদ্দেশ্য পূরণের চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে। তিনি খুন হয়েছেন, আমিও হতে পারি।
যা হয় হবে, কিন্তু আমি কোনো অন্যায় চাপের কাছে মাথা নত করব না।’
বুধবার (১৯ জুলাই) রাতে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের পক্ষে একটি নতুন রাজনৈতিক জোটকে মাঠে নামানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, এমন দলগুলো এই জোটে থাকবে। বৈঠকে ১৪ দল সম্প্রসারণ না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
প্রায় ১৬ মাস পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী ও মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।
বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পরাশক্তিগুলোর তৎপরতার বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘পরাশক্তিগুলোর সঙ্গে আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই। তাদের নানা পরামর্শও আমরা গ্রহণ করে থাকি। কিন্তু দেশবিরোধী কোনো কিছু চাপিয়ে দিতে চাইলে তা আমরা মানব না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পরাশক্তিগুলোর মধ্যে নানাভাবে ভারসাম্য রক্ষা করে আমাকে চলতে হয়।
একজনের কাছ থেকে সাবমেরিন কিনলে আরেকজন চাপ দেয়। ফলে একেকজনের কাছ থেকে একেকটা কিনব। তবে যারা আমাদের স্যাংশন দেবে, তাদের কাছ থেকে কিছু কিনব না।’
সভায় ১৪ দল সম্প্রসারণে আরো দু-একটি দলকে যুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা তোলেন জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। তবে একাধিক শরিক দলের নেতা এটার বিরোধিতা করেন। তখন যারা সরকারের পক্ষে আছে কিন্তু নীতিগত বা আদর্শিক কারণে জোটে নেওয়া যাচ্ছে না, তাদের পৃথক জোট গঠন করে ভূমিকা রাখার বিষয়ে নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘আমি বলেছি, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় যথাসময়ে নির্বাচনের বিকল্প নেই। এই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতকে ক্ষমতার বাইরে পাঠাতে হবে।’
বৈঠকে পণ্যদ্রব্যের বাজার অস্থির করার পেছনের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান একাধিক নেতা। তাঁরা দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের কারণে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে জানান। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন শেখ হাসিনা।
বৈঠকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান একাধিক নেতা। ইইউ প্রতিনিধিদলের সম্প্রতি এবি পার্টির সঙ্গে বৈঠকের তীব্র সমালোচনা করেন রাশেদ খান মেনন।