Friday , 22 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
‘যদি কোনো দেশের সাহায্যের প্রয়োজন হয়,আমরা দিতে প্রস্তুত’
--ফাইল ছবি

‘যদি কোনো দেশের সাহায্যের প্রয়োজন হয়,আমরা দিতে প্রস্তুত’

অনলাইন ডেস্ক:

পারস্পরিক সহযোগিতার এই বিশ্বে বাংলাদেশ অন্য দেশের প্রয়োজনেও সাহায্য-সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা সবার কাছ থেকে সহায়তা আশা করি। তেমনিভাবে কোনো দেশের যদি আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন হয়, আমরা তা দিতে প্রস্তুত।’

গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি নবনির্মিত ফরেন সার্ভিস একাডেমি ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা অ্যান্ড দি ইউনাইটেড নেশনস : বাংলাদেশ অ্যাট দি ওয়ার্ল্ড স্টেজ’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু, দ্য পিপলস হিরো’—এই দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম বাংলায় ভাষণ দেওয়ার ৪৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদারে কূটনীতিকদের রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক কূটনীতি অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘কূটনৈতিক মিশনগুলোর দায়িত্ব আজকের বিশ্বে পরিবর্তিত হয়েছে। এখন রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক কূটনীতি সামনে উঠে এসেছে। আমাদের এমনভাবে কূটনীতি অবলম্বন করতে হবে, যাতে আমরা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদার করতে পারি এবং বিশ্বের সবার সঙ্গে একত্র হয়ে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারি।’ একই সঙ্গে তিনি বিশ্বে শান্তি বজায় রাখতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বঙ্গবন্ধু হলেন প্রথম বাঙালি, যিনি ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রথম বাংলায় ভাষণ দেন। গতকালের অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম বাংলায় ভাষণ এবং সুগন্ধায় বঙ্গবন্ধুর প্রথম কার্যালয়ের দুটি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন প্রদর্শিত হয়। এতে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম দিকের চিত্র তুলে ধরা হয়।

জাতির পিতার অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করাই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা এ দেশের মানুষকে যে মর্যাদার আসনে বসিয়েছিলেন, তাঁকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে তা ভূলুণ্ঠিত হয়।

শেখ হাসিনা বিশ্বরাজনীতির প্রেক্ষাপটে দেশের পররাষ্ট্রনীতির প্রসঙ্গ টেনে দুর্যোগ মোকাবেলায় যৌথ উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে বিশ্বের সংঘাতপূর্ণ এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা প্রত্যেকেই বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করে তিনি এ সময় বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মাহুতি দানকারী বাংলাদেশি সৈনিকদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন।

এ সময় প্রতিবছর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশগ্রহণের জন্য নিউ ইয়র্কে থাকলেও এ বছর করোনার জন্য যেতে না পারায় এবং বিশ্বনেতাদের মিলনমেলায় অংশ নিতে না পারার আক্ষেপ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ১৬ বার জাতিসংঘে গিয়ে ভাষণ দিয়েছি; কিন্তু ১৭তম ভাষণ দেওয়ার সময় যেতে পারছি না, যেটা খুব দুঃখের। কারণ সেখানে বিশ্বের সব দেশের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত্ এবং মতবিনিময়ের সুযোগ হয়। একে অপরের অভিজ্ঞতা জানা এবং বিনিময়ের যে সুযোগ সেটা এবার করোনাভাইরাসের কারণে হলো না।’

কভিড-১৯ মহামারি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি, বিশ্ব করোনাভাইরাস মহামারি থেকে মুক্তি পাবে এবং অর্থনীতির চাকা আবার ঘুরতে শুরু করবে এবং এভাবে সবাই তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে এবং এ জন্যই গোটা বিশ্বকে একত্রে কাজ করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বর্তমান বিশ্বকে একটি ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য সকলের সহযোগিতা সমানভাবে দরকার।’

প্রধানমন্ত্রী ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জাময়ায়াতের আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যার প্রসঙ্গ টেনে দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের অসহযোগিতারও ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, ‘এই অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা যখন চালানো হয়, তখন আমরা দেখেছি মানুষকে খুন করা বা পুড়িয়ে হত্যার মতো ঘটনা।’

আওয়ামী লীগ সরকার সব ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে একাধিকবার দেশ পরিচালনায় দায়িত্ব পাওয়ার এবং দেশকে বর্তমান পর্যায়ে তুলে আনতে পারার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা এটা পেরেছি একটাই কারণে, যেহেতু জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আমরা অর্জন করতে পেরেছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওপর এ দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে বলেই বারবার আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করায় আমরা সরকার গঠন করে তাদের সেবা করতে পেরেছি। আজকে উন্নয়নগুলোও যেমন দৃশ্যমান হচ্ছে এবং এর সুফলও ভোগ করছে দেশের জনগণ।’

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ও বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো বক্তব্য দেন। ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকার নবনির্মিত ভবন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply