ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: অবশেষে পুরাতন শহরের উল্টোদিকে
ব্রহ্মপূত্র নদের তীর ঘেঁষে ওপারের চরাঞ্চলে স্থাপিত হচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত ময়মনসিংহ
বিভাগীয় নগরী। নদের ওপারে চর ঘিরে ৯৪৫.২১৯ একর জমির উপর বহুল প্রত্যাশিত
সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত দৃষ্টিনন্দন নতুন বিভাগীয় সদর দপ্তর
স্থাপনে প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
দ্রুত সময়ের মধ্যে সদর দপ্তরের ডিপিপি এবং টিএপিপি চূড়ান্তকরে প্রকল্প
অনুমোদনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করার প্রত্যাশা করছেন
ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শফিকুর রেজা বিশ্বাস। পরিকল্পিত শহর গড়ে
তুলতে সরকারের নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর, স্থাপত্য অধিদপ্তর এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরকে
দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিকল্পণা গ্রহনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন
বিভাগীয় কমিশনার।
বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শফিকুর রেজা বিশ্বাস জানান, অধিগ্রহন এলাকার
লোকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং সন্মানজনক পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমান সরকার অধিগ্রহনকৃত জমির মূল্য তিনগুন
বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপণ জারি করেছেন। তাই ক্ষতিগ্রস্তরা জমির প্রচুর মূল্য পাবেন।
অধিগ্রহনকৃত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের ২৫ একর জমি রাখা হয়েছে। সেখানে
তাদের পুনর্বাসন করা হবে। প্রথমেই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বিভাগীয় সদর দপ্তর স্থাপনের লক্ষ্যে প্রস্তাাবিত ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্থদের
ক্ষতিপূরণ ও পূনর্বাসন শীর্ষক প্রকল্পের অনুকূলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক
ভূমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন পরবর্তী করণীয় শীর্ষক এক আলোচনা
সভা গত ৪ আগষ্ট সকাল ১০টায় বিভাগীয় কমিশনারে কার্যালয়ে হয়েছে।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শফিকুর রেজা বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সভায়
বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিভাগীয় কমিশনার জমি অধিগ্রহনের লক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। এছাড়া অবকাঠামো নির্মাণের
জন্য টেকনিক্যাল এসিসটেন্স ফর প্রজেক্ট প্রোফর্মা (টিএপিপি) এবং
ডেভোলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের
জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে অনুরোধ বলা হয়। প্রস্তাবিত
প্রকল্পে পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়াদি উল্লেখ করার আহবান জানান। ভূমি
অধিগ্রহনে ক্ষতিগ্রস্থদের পাড়ালক্ষীর আলগী মৌজায় ২৫ একর জমিতে
পুনর্বাসনের রূপরেখা তৈরির নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মোতাবেক
ব্রহ্মপূত্র নদের উপর ৩টি সেতু নির্মাণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য
সড়ক ও জনপথ বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক/রাজস্ব) এস.এ. এম
রফিকুন্নবী, ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক, পরিবেশ
অধিদপ্তরের পরিচালক ফরিদ আহমদ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ জোনের
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ সৈয়দ মইনুল হাসান, গণপূর্ত ময়মনসিংহ
সার্কেলের তত্ত্ধসঢ়;বাবধায়ক প্রকৌশলী একেএম কামরুজ্জামান, পানি উন্নয়ন
বোর্ড ময়মনসিংহ সার্কেলের তত্ত্ধসঢ়;বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ শাহজাহান
সিরাজ, গণপূর্ত ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাইফুজ্জামান
চুন্নু, সওজ ময়মনসিংহ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান,
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সমর কান্তি বসাকসহ বিভাগীয় এবং জেলা
পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার চরাঞ্চলের গোবিন্দপুর, পাড়ালক্ষীর আলগী, জেলখানার চর,
চরসেহড়া ও চর ঈশ্বরদিয়াসহ ৫টি মৌজার অংশ বিশেষ নিয়ে ৯৪৫.২১৯ একর
জমিতে বিভাগীয় সদর দপ্তরসহ অন্যান্য স্থাপনার জন্য জমি অধিগ্রহনে জনপ্রশাসন
মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পণা শাখার উপসচিব নূর্শিয়া কমল স্বাক্ষরিত মন্ত্রণালয়ের পক্ষে
প্রশাসনিক অনুমোদনের চিঠি দেয়া হয়।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক জানান, ভূমি অধিগ্রহনের
ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই শুরু করা হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভগীয়
সদর দপ্তর স্থাপনের জন্য এরআগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০১৬
সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সভায় বিভিন্ন নির্দেশনা
দিয়েছিলেন। তন্মধ্যে ব্রহ্মপূত্র নদের নদের উপর ৩টি ব্রিজসহ পরিকল্পিত উন্নয়ন
অবকাঠামো নির্মাণের নির্দেশনা প্রদান করেন। দীর্ঘ ৫বছর পর পুনরায়
ময়মনসিংহ বিভাগীয় সদর দপ্তর স্থাপনের লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক অগ্রগতি পরিলক্ষিত
হচ্ছে।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় সদর দপ্তরকে একটি অত্যাধুনিক পরিকল্পিত শহর হিসেবে
গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে
ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নূরুল আমিন
কালাম জানান, প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্থদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের নির্দেশ
দিয়েছেন। সরকারের এই মহতি উদ্যোগের বাস্তবায়নে কেউ যাতে কোনো প্রকার
অপপ্রচার ছড়াতে না পারে সে ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকতে হবে । ক্ষতিগ্রস্থরা
যাতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পায় এবং তাদের পাওনা পেতে যাতে কোনো হয়রানির শিকার
হতে না হয় সে ব্যাপারে সরকারী কর্মকর্তাদের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।
সেইসাথে জনগণ যাতে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়, সেলক্ষ্যে সরকারের গৃহীত
সুযোগ-সুবিধাসমূহ জমি অধিগ্রহনকৃ এলাকার লোকদের মাঝে ব্যাপকভাবে
প্রচার করার জন্য প্রশাসন, ক্ষমতাসীন দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের
নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান।