Friday , 22 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী আব্দুল মতিন গ্রেপ্তার
--সংগৃহীত ছবি

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী আব্দুল মতিন গ্রেপ্তার

অনলাইন ডেস্ক:

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. আব্দুল মতিনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গত রবিবার রাতে সিলেটের গোলাপগঞ্জ এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। র‍্যাব জানায়, মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ নিয়ে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন এই অপরাধী। তিনি মৌলভীবাজার বড়লেখার পাখিয়ালার মৃত মিরজান আলীর ছেলে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর টিকাটুলী এলাকায় র‍্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর আব্দুল মতিন, আব্দুল মান্নান ওরফে মনাই ও আব্দুল আজিজ ওরফে হাবুলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাইব্যুনাল তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ২০১৬ সালের ১ মার্চ আব্দুল আজিজ ও আব্দুল মান্নান গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে তাঁরা কাশিমপুর কারাগারে আটক রয়েছেন। আব্দুল মতিন আত্মগোপনে চলে যান। ট্রাইব্যুনালের তদন্তে তাঁদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২০২২ সালের ১৯ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তিন জনকেই মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।

১৯৭১ সালের ১৯ মে আব্দুল মতিনসহ এই মামলার অন্য দুই আসামি আব্দুল আজিজ, আব্দুল মান্নান এবং তাঁদের সহযোগীরা মিলে মৌলভীবাজারের বড়লেখা থানাধীন ঘোলসা গ্রাম থেকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতা হরেন্দ্রলাল দাস ওরফে হরিদাস, মতিলাল দাস, নগেন্দ্র কুমার দাস ও শ্রীনিবাস দাসকে অপহরণ করেন। তাঁদের তিন দিন যাবৎ বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে আটক রেখে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। পরে জুড়ি বাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে তিনজনকে হত্যা করা হয়। অপহরণকৃত শ্রীনিবাস দাস নির্যাতিত অবস্থায় কোনোক্রমে পালিয়ে কয়েক দিন পর বাড়ি ফিরে যান।

১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে আব্দুল মতিন, মামলার অন্য আসামি আব্দুল আজিজ ও আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা বড়লেখা থানাধীন কেছরিগুল গ্রামের বাসিন্দা সাফিয়া খাতুন ও আব্দুল খালেককে অপহরণ করে কেরামত নগর টি-গার্ডেন রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যান। রাজাকার ক্যাম্পে আসামিরা সাফিয়া খাতুনকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। পরবর্তী সময়ে তাঁরা টি-গার্ডেন রাজাকার ক্যাম্প থেকে সাফিয়া খাতুনকে প্রথমে শাহবাজপুর রাজাকার ক্যাম্প এবং কিছুদিন পর বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানেও সাফিয়া খাতুনকে বারবার গণধর্ষণ করা হয়। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বড়লেখা হানাদারমুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধারা সাফিয়া খাতুনকে সিও অফিসের বাংকার থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন।

১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর মতিন, মামলার অন্য আসামি আব্দুল আজিজ ও আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা বড়লেখা থানাধীন হিনাই নগর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা মুস্তাকিন কমান্ডারের বাড়িতে সশস্ত্র হামলা করেন। মুক্তিযোদ্ধা মুস্তাকিনকে তাঁরা বাড়িতে না পেয়ে তাঁর ভাই মতছিন আলীকে অপহরণ করে বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করেন। তাঁদের অমানবিক নির্যাতনের ফলে মতছিন আলীর পা ভেঙে যাওয়াসহ গুরুতর আহত হন। পরবর্তী সময়ে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা মুস্তাকিন ও মতছিন আলীর বসতবাড়িতে লুটতরাজ চালান এবং অগ্নিসংযোগ করে কয়েকটি টিনের ঘর পুড়িয়ে দেন।

১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর আব্দুল মতিন এবং অন্যরা মিলে বড়লেখা থানাধীন ডিমাই বাজার থেকে মুক্তিযোদ্ধা মনির আলীকে আটক করেন। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর ভাই মুক্তিযোদ্ধা হাবিব কমান্ডারকে আটক করার জন্য তাঁদের বাড়িতে হামলা চালান। সেখান থেকে তাঁরা মনির আলী ও তাঁর স্ত্রী আফিয়া বেগমকে অপহরণ করে কেরামত নগর টি-গার্ডেন রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যান। ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পরে তাঁরা মনির আলীর স্ত্রী আফিয়া বেগমকে পালাক্রমে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন। বসতবাড়িতে হামলা চালানোর সময় হাবিব কমান্ডার ও মনির আলীর ঘরের যাবতীয় মালপত্র লুটপাট করে নিয়ে যান রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা।

সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply