অনলাইন ডেস্ক:
সরকারের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তবে শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, মুজিবের বাংলায় কেউ গৃহহীন থাকবে না। এরই মধ্যে ৭০ হাজার গৃহহীনকে ঘর দেওয়া হয়েছে। আরো এক লাখ ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এই ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, মানুষের কল্যাণ হচ্ছে বলেই দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস আওয়ামী লীগ অর্জন করেছে। যার প্রতিফলন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্যের কথা তুলে ধরে বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে এত কথা অথচ এ রকম একটা কাজ নিজস্ব অর্থায়নে করলাম। সেটার প্রশংসা তো করতেই পারল না। উল্টো বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিল জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করা হয়েছে।
সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১২ বছর সরকার একটানা ক্ষমতায় থাকায় উন্নয়নকাজ দৃশ্যমান হয়েছে। বিএনপির সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা আয়নায় মনে হয় ভালো করে চেহারা দেখে না। আয়না দেখে নিশ্চয়ই সেটা মেকআপের জন্য। কিন্তু নিজেদের কাজগুলো দেখে না।’ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তাঁর সরকার দেশকে নিজ পায়ে দাঁড় করাতে চেয়েছে। সেটা পেরেছে। জনগণ ভোট দিয়েছে, তাদের মর্যাদা রক্ষা করা, সেবা করা সরকারের দায়িত্ব। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
বিএনপির রাজনীতির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেছেন, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি যখন একটা দলের নেতা, স্বাভাবিকভাবে তাদের ওপর মানুষের আস্থা থাকে না, বিশ্বাস থাকে না। মানুষ এখন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সেবা পাচ্ছে, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, দেশের মানুষের কল্যাণ হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে মানুষের আস্থা-বিশ্বাস আওয়ামী লীগ অর্জন করেছে। যার প্রতিফলন দেখলাম স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে। মানুষ এখন আন্তরিকভাবে ভোট দিচ্ছে।
জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দিচ্ছি। সেখানে ভোট নিয়ে কারচুপি করার কোনো সুযোগ নেই। যার যার ভোট সে নিজে দিচ্ছে। এখন আর ‘১০টা হোন্ডা ২০টা গুণ্ডা নির্বাচন ঠাণ্ডা’ সেই পদ্ধতি নেই। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ছোটখাটো দু-একটা ঘটনা ছাড়া অত্যন্ত সুষ্ঠু সুন্দরভাবে জনগণ ভোট দিয়েছে। ভোট দেওয়ার আগ্রহ মানুষের মাঝে আমরা লক্ষ করেছি। সে জন্য দেশবাসীকে অভিনন্দন, ধন্যবাদ।
করোনাভাইরাস বিশ্ব থেকে চলে না যাওয়া পর্যন্ত সবাইকে মাস্ক পরে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। তার পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যাঁরা করোনার ভ্যাকসিন নেবেন তাঁদেরও মাস্ক পরে চলতে হবে। পরিস্থিতি আরো কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে। প্রথম কারা করোনা ভ্যাকসিন পাবেন সেটাও আমরা ঠিক করে ফেলেছি। এ নিয়ে দেশে প্রশংসা শুনিনি। কিন্তু জাতিসংঘ মহাসচিব প্রশংসা করেছেন।
সংসদ নেতা বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত দেশ তখন সারা বিশ্বে দুর্নীতিতে এক নম্বর ছিল। দুর্নীতির মামলায় যারা সাজাপ্রাপ্ত এরা যখন কোনো দলের নেতৃত্বে থাকে সেই দল জনগণের কাজ করবে কিভাবে? জনগণ তাদের কাছ থেকে আস্তে আস্তে সরে গেছে।
সংসদের অধিবেশন সমাপ্তি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সফলভাবে এই অধিবেশন পরিচালনা করা হয়েছে। মনে হচ্ছে আমি একটা বড় কারাগারে বন্দি আছি। সংসদ চলার সময় আমি অধিবেশনে আসি, ভালো লাগে। সংসদে এসে সবার সঙ্গে দেখা হয়। তিনি আরো বলেন, এই অধিবেশনে এত অল্প সময়ের মধ্যে ১৩২ জন সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বক্তব্য দিয়েছেন। কাজেই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন। করোনাকালে অধিবেশন পরিচালনার জন্য স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি।