অনলাইন ডেস্কঃ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পলাতক পাঁচ খুনির অন্তত একজনকে মুজিববর্ষেই দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর করা হবে। আমি ওয়াদা করছি, মুজিববর্ষের মধ্যেই পলাতক রাশেদ চৌধুরীকে দেশে এনে শাস্তির মুখোমুখি করব। এটা এখন জনগণেরও প্রত্যাশা। এজন্য জনগণেরও সহযোগিতা লাগবে। গতকাল শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে মুজিববর্ষ উপলক্ষে জনতার প্রত্যাশা আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু-বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। সভাপতিত্ব করেন জনতার প্রত্যাশার সভাপতি এমএ করিম।
এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মধ্য দিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়, যাতে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা ছাড়া পেয়ে যান। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ খোলে। তখন বিচার শুরু হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচারের গতি শ্লথ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর বিচার শেষে ২০১০ সালে পাঁচ খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। সর্বশেষ গত এপ্রিলে পলাতক আবদুল মাজেদ ধরা পড়লে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে।
এ কে আবদুল মোমেন বলেন, এখনও দণ্ডিত পাঁচ খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে রয়েছেন। তারা হলেন আবদুর রশীদ, শরীফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও এবিএমএইচ নূর চৌধুরী। এদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় অবস্থান করছেন। তাদের ফেরত পাঠাতে বহু বছর ধরেই দুই দেশের সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীকে দেশে আনার প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েছে। পাঁচজনের মধ্যে দু’জনের ঠিকানা আমরা জানি। এ ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। বেশ অগ্রসর হয়েছি। আগে তো কথাই শুনতে চায় নাই, এখন কথা শুনছে। তিনি বলেন, মার্কিন সাময়িকী পলিটিকো গত মাসে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাশেদ চৌধুরীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে মার্কিন বিচার বিভাগ। এর চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে তার রাজনৈতিক আশ্রয় হারাতে পারেন এবং তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।
রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীকে দেশে আনতে দেশে-বিদেশে জনমত গড়ে তোলায় গুরুত্ব আরোপ করার ব্যাপারে এ কে আবদুল মোমেন বলেন, আমি এর জন্য সব বাংলাদেশি, প্রবাসী বাংলাদেশি ও মুক্তিযোদ্ধাদের অনুরোধ করছি, আপনারা একটা সিগনেচার ক্যাম্পেইন করেন। যদি আগামী ১৬ ডিসেম্বরের আগে কয়েক লাখ সিগনেচার সংগ্রহ করতে পারি তাহলে ইস্যুটা আরও শক্তিশালী হবে। প্রবাসীদের মধ্যে জনমত গড়ে উঠলে কানাডার নাগরিকরাও সে দেশ থেকে খুনিকে বিতাড়িত করতে ‘আন্দোলন শুরু করবেন’। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, করোনার ভ্যাকসিন যেখান থেকেই পাওয়া যায়, তা আনা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তেই সবার আগে যেখান থেকে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে, সেখান থেকেই নেয়া হবে।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছেন। কোনো লাভ নাই। সামনে উপনির্বাচন আছে। আপনাদের জনমত যাচাই করে দেখেন।
সভায় বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য নুরুল আমিন রুহুল, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান খান, কৃষক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, মুক্তিযাদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাদেক খান, জাতীয় মুক্তিযাদ্ধা সমন্বয় পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন প্রমুখ।