Thursday , 21 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য স্থান দখল করে আছে ‘শেরপুর ৭১’

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য স্থান দখল করে আছে ‘শেরপুর ৭১’

অনলাইন ডেস্ক:

পাশাপাশি নারী আর পুরুষ। দুজনেরই এক হাতে রাইফেল, অন্য মুষ্টিবদ্ধ হাতে আকাশ ছোঁয়ার অভিপ্রায়। এটি মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ। রড সিমেন্ট কংক্রিটের তৈরি ভাস্কর্যটির ফিগারের উচ্চতা ১৫ ফুট এবং প্রস্থ পাঁচ ফুট। ফিগারগুলো আংশিক অ্যাবস্ট্রাক্ট মোটিফে করা। দক্ষিণ দিকে মুখ করা নারীর বাঁ হাতে রাইফেল আর মুষ্টিবদ্ধ ডান হাত ওপরের দিকে।

একইভাবে উত্তর দিকে মুখ করা পুরুষটির বাঁ হাতে রাইফেল আর ওপরে তোলা ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ। ভাস্কর্যটির পশ্চিম দিকে রয়েছে গ্রানাইটের একটি আয়না। গোলাকার এই আয়নাটি উদীয়মান সূর্যের প্রতীক। আয়নাটি ভেতর দিকে কেটে বাংলাদেশের মানচিত্রের প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যা বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রতীক। চার কোনা একটি বেদির ওপর ভাস্কর্যটি নির্মিত। বেদিটি হলো বাংলার মাটি। নিচে বেদির চারদিকে লাইট-ফোয়ারা রয়েছে। বিশেষ দিবসগুলোর রাতে লাইট-ফোয়ারা চালু করলে ভাস্কর্যটির অপরূপ সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনা বিজয়ের স্মারক ভাস্কর্যটি মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলার সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মূর্ত প্রতীক হয়ে আছে। শেরপুর শহরের প্রবেশমুখে রঘুনাথ বাজার এলাকায় জেলা পরিষদ ডাকবাংলো চত্বরে দাঁড়িয়ে আছে ‘শেরপুর ’৭১’ নামের ভাস্কর্যটি।

জেলা পরিষদের অর্থায়নে ২০১৪-১৫ সালে ভাস্কর্যটি নির্মাণে খরচ হয় ছয় লাখ টাকা। ভাস্কর মো. হারুন অর-রশীদ কয়েকজন রাজমিস্ত্রি নিয়ে নিজেই এটির নির্মাণকাজ করেন। নির্মাণকাজ শেষ করতে সময় লেগেছে প্রায় দুই মাস।

‘শেরপুর ’৭১’ নির্মাণের ব্যাপারে ভাস্কর মো. হারুন অর-রশীদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে শেরপুর অঞ্চল এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। শেরপুর অঞ্চলের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের আলোকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বজনীন বিষয়টি তুলে ধরতেই এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ কাজে আমি কোনো সম্মানী নিইনি। শুধু নির্মাণ উপকরণ যা ব্যয় হয়েছে, সেই টাকা জেলা পরিষদ বরাদ্দ দিয়েছে।’

ভাস্কর্যটির উদ্বোধক সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম বলেন, ডাকবাংলো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। তা ছাড়া এলাকাটি শহরের প্রবেশপথ। বাইরে থেকে অতিথিরা এসে এখানে অবস্থান করেন। এটি জেলা পরিষদের নিজস্ব জায়গা। এ জন্য সেখানে ‘শেরপুর ’৭১’ ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়। ভাস্কর্যটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শাণিত করবে।

উদীচী শেরপুর জেলা সংসদের সভাপতি অধ্যক্ষ তপন সারোয়ার বলেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে ভাস্কর্যটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বিজয়ের স্মারক হিসেবে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরছে।

নাগরিক প্ল্যাটফর্ম জন-উদ্যোগ শেরপুর কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের মহান মুক্তিসংগ্রামেও পুরুষের পাশাপাশি নারীদের সমান অংশগ্রহণ বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছে। এটি আমাদের চেতনার বহ্নিশিখা।’

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply