অনলাইন ডেস্ক:
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। “ফ্রিডম অফ স্পিচ” এর নামে, বাক-স্বাধীনতার নামে, লিবারেলিজমের নামে, মুক্তচিন্তার নামে, ধর্মনিরপেক্ষতার বা সেকুলারিজমের নামে যারা ইসলাম নিয়ে এবং মহানবী (সা:) নিয়ে কটুক্তি করে, তারা মানবতাবিরোধী, শান্তি বিরোধী – হিপোক্রেটস বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।
শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) নয়াপল্টনের যাদু মিযা মিরনায়তনে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয মানবাধিকার সমিতি আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোতে ইহুদিদের হলোকস্ট নিয়ে কোনো কটুক্তি করলে এটি সাজাপ্রাপ্ত অপরাধ – আ্যন্টি-সেমিটিজম বলা হয়। বাকস্বাধীনতা এখানে কোথায় গেল? হিপোক্রেসি! ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন সমগ্র মানবজাতিকে অপমান করেছে। আজকে আমরা সুন্নী-শিয়া নয়, সুফী-ওয়াহিবী নয়, হানাফী-মালেকী-শাফেয়ি-হাম্বলী নয়, আমাদের প্রথম এবং শেষ পরিচয় আমরা সকলেই মুসলমান। মুসলিম উম্মাহ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারে, আমাদের বিজয় অবশ্যম্ভাবী।
তিনি বলেন, রাসুল (সা.) মানবতার মুক্তির বারতা নিয়েই এ জগতে এসেছিলেন। তিনিই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সফল হয়েছিলেন। সে সময় ছিল ‘আইয়ামে জাহিলিয়াত’ বা অন্ধকার যুগ। অজ্ঞানতা, পাপাচার, যুদ্ধবিগ্রহ, সহিংসতা, শিশুহত্যা ও কন্যাশিশুকে জীবন্ত মাটিচাপা দেওয়ার মতো অমানবিক প্রথার প্রচলন ছিল। ইসলামে মানবতাবিরোধী সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কোরআন অবমাননার নামে লালমনিরহাটে যা ঘটেছে, তা মেনে নেয়া যায়না। কুরআন অবমাননার অভিযোগ, পুড়িয়ে মারার অধিকার তাদের কে দিল? ওরা ধার্মিক নয়, ধার্মিক হতে পারে না। ইসলাম অবমাননার অভিযোগ এনে যে হিংস্রতার আশ্রয় নেওয়া হল, তা কোনভাবে মেনে নেওয়া যায়না। যারা এই হত্যার সাথে জড়িত, মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এদের বিচার করা প্রয়োজন। আর যারা এই অঘটনকে সমর্থন দান করছে, তাদের শনাক্ত করতে হবে। সামাজিকভাবে তাদের বয়কট করতে হবে। এরাই ধর্মান্ধ, এরাই উগ্রবাদী, এরাই চরমপন্থি। মানুষ কেমনে এত হিংস্র হয়? মসজিদে প্রস্রাবকারির সাথে নবিজীর কেমন আচরণ ছিল- এরা কি জানেনা?
সংগঠনের চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা’র সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট এহসানুল হক জসীম, জাতীয় জনতা ফোরাম সভাপতি মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার, ন্যাপ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামাল ভুইয়া, সংগঠনের মহাসচিব এডভোকেট সাইফুল ইসলাম সেকুল, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেল্লাল হোসেন রাজু, কেন্দ্রীয় নেতা হাফেজ মো. মাসুম বিল্লাহ, ওলামা দল নেতা হাফেজ মো. মাসুম বিল্লাহ, হাফেজ মো. ইখলাস উদ্দীন বাবুল, জিয়াউল হাসান, এম এম শাহজাহান কামাল, দপ্তর সেলের সদস্য মারুফ সরকার, শহিদুল ইসলাম, মো. শাকিল, ইমন আহমেদ, ফজলে রাব্বী, মো. জিসান প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা বলেন, সব মানুষ একই পিতা–মাতার সন্তান; সব মানুষ একই রক্তে-মাংসে গড়া; তাই সাদা-কালোয় কোনো প্রভেদ নেই। সব মানুষ আখেরি নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর উম্মত। কবরে ও হাশরে সবাইকে একই প্রশ্ন করা হবে। সুতরাং, সব মানুষের মানবাধিকার সমান।
তিনি বলেন, মহানবী (সা.) এর শিক্ষা হলো মানবাধিকারের সুরক্ষা ও বাস্তবায়ন। নারী ও শিশু, বিশেষত কন্যাশিশু এবং অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের মানবাধিকার সুরক্ষা করা সচেতন ও সামর্থ্যবান সব নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব। বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত মহানবী রাসুল (সা.)কে যারা অবমাননা করেছে তাদের সকল ধরনের পণ্য বর্জন আমাদের ঈমানী ও নৈতিক দায়িত্ব।
এডভোকেট সাইফুল ইসলাম সেকুল বলেন, মহানবী (সা.) হেদায়াত ও সংস্কারের এক আলোকবর্তিকা নিয়ে মানবতার কাছে উপস্থিত হয়েছেন। অন্ধকারময় আরবে মানবতার বার্তা নিয়ে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন রাসুল (সা.)। বাকস্বাধীনতার নামে ফ্রান্স মহানবী (সা.)কে নিয়ে যে কুটুক্তি করেছে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
তিনি বলেন, ফ্রান্স ধারাবাহিকভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বর্বরতার কালো ইতিহাস রচনা করে এসেছে। তারা রাসুল (সা.)কে নিয়ে কুটুক্তি করার ধৃষ্টতা দেখায়। ঈমানী স্বার্থেই তাদের বর্জন করা সময়ের দাবী।
আলোচনা সভা শেষে বিশেষ মিলাদ ও দোয়া পরিচালনা করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা হাফেজ মো. মাসুম বিল্লাহ। .