Saturday , 23 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
মিয়ানমারে যখন মুসলিমদের আগমন হয়েছিল
--সংগৃহীত ছবি

মিয়ানমারে যখন মুসলিমদের আগমন হয়েছিল

ধর্ম ডেস্ক:

মিয়ানমারে ইসলামের আগমন ঘটে আরব ও পারস্যের মুসলিম বণিকদের মাধ্যমে। মুসলিম ব্যবসায়ীরা খ্রিস্টীয় সপ্তম শতক থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত আফ্রিকার মাদাগাস্কার থেকে দক্ষিণ চীন সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে তাদের বাণিজ্যিক অভিযান পরিচালনা করত। নৌপথে বাণিজ্যকারীদের জন্য মিয়ানমার ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র। এ সময় মিয়ানমারে একাধিক সমুদ্রবন্দর গড়ে ওঠে।

মিয়ানমারে ইসলাম প্রসারে আরব বণিকরা মুখ্য ভূমিকা পালন করলেও দেশটিতে ইসলাম প্রচারে অন্যদেরও জোরালো অবদান রয়েছে। আরব বণিকরা মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা থেকে পণ্য সংগ্রহ করে ভারতীয় উপকূল হয়ে চীনে পণ্য নিয়ে যেত। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে তারা মিয়ানমারের মুত্তামা সমুদ্রবন্দরে পৌঁছে যান।

নবম শতাব্দীতে মিয়ানমারের অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলে তাদের যাতায়াত শুরু হয়। অষ্টম শতাব্দীর শুরুতে জাহাজ ধ্বংস হওয়ার কারণে একদল আরব বণিক রামরি দ্বীপের কিয়কপুতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে।

আরবরা তাদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, সততা, সাহসিকতা ইত্যাদির কারণে সহজেই মিয়ানমারে সামাজিক ও রাজনৈতিক মর্যাদা লাভ করে। এমন কয়েকজন মুসলিম বিশিষ্টজন হলেন সেনাপতি খান সাহেব আবদুল করিম, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ওয়ালি খান ও আমির আউশাং, প্রধান বিচারপতি আবেদ শাহ হুসাইনি, বিচারক আবদুল করিম, আরাকানের শাসক হাজি আলী খান, সেনাপতি ইয়াকুব প্রমুখ।

স্থলপথে মিয়ানমারে ইসলাম প্রচারে বাঙালি মুসলমানদের ভূমিকাই মুখ্য। বিশেষত আরাকান অঞ্চলে। পঞ্চদশ শতাব্দীতে চন্দ্র-সূর্য বংশের রাজা অযুথুর পুত্র নরমিখলা স্বীয় চাচাকে উৎখাত করে আরাকানের ক্ষমতা দখল করেন। কিন্তু বার্মার রাজা মেং মো আই আরাকানে আক্রমণ করলে তিনি গৌড়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তিনি দীর্ঘ ২৪ বছর বাংলার শাসকের আশ্রয়ে থাকেন। ১৪৩০ খ্রিস্টাব্দে সুলতান জালালুদ্দিন মুহাম্মদ শাহের সহযোগিতায় ক্ষমতা উদ্ধার করেন। তাঁর সহযোগিতার জন্য যাওয়া ৫০ হাজার মুসলিম সেনার অনেকে সেখানে থেকে যান। রাজা তাঁদের সম্মানে রাজধানী ম্রোহংয়ে একাধিক মসজিদ স্থাপন করেন। রাজ্য উদ্ধারের পর নরমিখলা মাত্র চার বছর রাজত্ব করেন। তখন আরাকানরাজ বাংলার সুলতানদের মতো মুদ্রার এক পীঠে ফারসি অক্ষরে কলেমা ও মুসলমানি নাম লেখার রীতি চালু করেন, যা পরবর্তী ২১৫ বছর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এ সময় মুসলিমরা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় পদেও নিযুক্ত হন। যেমন প্রধানমন্ত্রী, সেনাপতি, মন্ত্রী, বিচারক প্রভৃতি। মুসলিলম নিজেদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে রাজ্যের উন্নয়নে অবদান রাখেন। নানা সংকটের মধ্যে ১৭৮২ সাল পর্যন্ত তাদের শাসন টিকে ছিল। এরপর বর্মীরাজ ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু ১৮২৩ সালে সে ইংরেজদের কাছে পরাজিত হয়।

সূত্র : আদ-দাওয়াতু ইলাল্লাহ ফি মিয়ানমার, পৃষ্ঠা ৮৯-৯৪; আরাকানে মুসলমানদের ইতিহাস, পৃষ্ঠা ১৩-১৬

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply