কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চাইতে মিল গেটেই কেজি প্রতি তিন থেকে চার টাকা বেশি দামে বিক্রির কারণে কুষ্টিয়ার খুচড়া বাজারে আবারও বেড়েছে মিনিকেট ও আটাস চালের দাম। বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে এমন অযুহাতে দেশের অন্যতম বৃহৎ চালের মোকাম খাজানগরের মিলাররা আর সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে চাল বিক্রি করছেন না। যার প্রভাবে খুচরা বাজারে হুহু করে বাড়ছে চালের দাম।
বিশেষ করে গত এক সপ্তাহে মিনিকেট চাল প্রকারভেদে কেজিতে বেড়েছে প্রায় চার থেকে ছয় টাকা। খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, গত সপ্তাহের তুলনায় অধিকাংশ চালের দাম প্রকারভেদে কেজি প্রতি বেড়েছে দুই থেকে ছয় টাকা। এর মধ্যে মিনিকেটেই বেড়েছে চার থেকে ছয় টাকা। তাই বেশি দামে চাল কেনার কারনেই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে মিল মালিকরা বলছেন, ভালো ফলন হলেও কমেনি ধানের দাম। বেশি দামে ধান কেনার কারণে চালের দাম বাড়াতে হচ্ছে তাদের।তিনমাস আগে সরকারের পক্ষ থেকে দেশের সব মিলারদের সঙ্গে বৈঠক করে চিকন (সবাচাইতে ভালো) চালের দাম মিলগেটে নির্ধারণ করা হয় প্রতিকেজি ৫১ টাকা ৫০ পয়সা এবং খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ৫৩ টাকা দামে। কিন্তু সেই নির্দেশনা মানছেন না মিলাররা।খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মিলগেটেই প্রকারভেদে সরকার নির্ধারিত দামের চাইতে কেজি প্রতি পাঁচ থেকে ছয় টাকা বেশি দরে মিনিকেট চাল বিক্রি করছেন মিলাররা। বিশেষ করে মিনিকেট নামে প্রচলিত চিকন চাল ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, যা মাস খানেক আগেও বিক্রি হয়েছিল ৫১ থেকে ৫২ টাকায়।চিকন চালের দাম বাড়ার কারণে বেড়েছে মোটা চালের দামও। তবে সেটা তুলনামুলক কম। এতে যেমন দিশেহারা হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ তেমনি খুচড়া বিক্রেতারাও আছেন বিপাকে। তাদের দাবি, মিলগেটে চালের দাম বেড়ে গেলেই খুচরা বাজারে দাম বাড়াতে বাধ্য হন তারা। মিল গেটে তেমন নজরদারি না থাকায় বাজারের এমন পরিস্থিতি বলেও তারা মনে করেন।কুষ্টিয়া বড়বাজার এবং পৌরবাজারের আড়তদার এবং খুচড়া বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিলগেট থেকেই মূলত চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ হয়। বর্তমানে মিলারদের কাছে চাল কিনতে গেলেই তারা বলছে মিলে চাল সংকট। তবে বেশি দাম দিলেই আবার চাল মিলছে। আর দোকান চালাতে তাদের চাল তোলাটাও জরুরি, তাই মিলারদের কথা মতোই তাদের চাল কিনতে হয়।অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, চালের দাম বৃদ্ধিতে তাদের কোনো কারসাজি নেই। এমনকি কারসাজি করারও কোনো সুযোগও নেই। কারণ, খুচরা বাজারে প্রশাসনের কঠোর নজরদারী থাকে। এ ছাড়াও অতিরিক্ত কিছু মনে হলেই ক্রেতারাও ক্ষেপে ওঠে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেন। কিন্তু মিলারদের দিকে সেই রকম কোনো নজরদারি থাকে না। তাই তারা ইচ্ছা মতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন।এ সব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে, চালের দাম বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে কুষ্টিয়া জেলা মিল মালিক অ্যাসোসিয়েশনের (একাংশ) সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, তিন বছর আগে সরকার চালের দাম যেভাবে বেঁধে দিয়েছিল, সেই দামে এখন আর চাল বিক্রি করা সম্ভব নয়। কারণ তখনকার পরিস্থিতি এবং এখনকার সময়কার পরিস্থিতি এক রকম নয়। ধানের দাম বৃদ্ধির কারণে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকার নিচে আগের সেই দামে আর চাল বিক্রি করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।চলতি মৌসুমে লক্ষমাত্রার চাইতেও বেশি পরিমাণের ধান উৎপাদনের পরেও কেন চালের বাম বেশি হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে ওমর ফারুক বলেন, ‘ধানের ফলন ভালো হলেও দাম কমেনি, বরং অনেক বেশি দাম দিয়ে আমাদের ধান কেনা লাগছে। তাই চালের উৎপাদন খরচও বেড়েছে।’তবে ধানের এত ভালো ফলনের পরেও চালের দাম বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক এবং মিলারদের কারসাজি বলে মনে করেন কুষ্টিয়া জেলা সচেতন নাগরিক সমাজ (সনাকের) সভাপতি রফিকুল ইসলাম টুকু। তিনি বলেন, ‘অসাধু মিলারদের কারণেই চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়।’ তাই তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।আর চালের দাম বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে জেলা বাজার কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘বাজারে আমাদের ‘নিয়মিত’ নজরদারি রয়েছে। অধিক লাভের জন্য কেউ বাজারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, চলতি আমন মৌসুমে জেলায় প্রায় ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়; যা লক্ষমাত্রার চাইতে ২২২ হেক্টর বেশি।