আচ্ছা আমরা কজনই বা পারি প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিশ্রুতি রাখতে? হয়তো গোটাকয়েক।
প্রতিশ্রুতি বেশিরভাগই ভঙ্গ হয় ভালোবাসার ক্ষেত্রে প্রেমিক-প্রেমিকার, ক্ষেত্রে, স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে, বছর পাঁচেক আগে আমার খুব পরিচিত একজন বিয়ে করে। তাদের অবশ্য পাঁচ বছরের প্রেম ছিল, এমন কোনো দিন নেই যে তারা দেখা করেনি। রাতের বেলা ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলেনি, কখন যে তাদের কথা বলতে বলতে ভোর হয়ে যেত তারা টের ও পেত না।
অথচ তারাই আজ বিচ্ছেদ নামক তথাকথিত শ্রেনীতে। ছেলেটি সেই মেয়েটির স্কুলের সামনে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতো শুধু একটু দেখবে বলে। মেয়েটির স্কুলের সামনে একটা কৃষ্ণচূঁড়া ফুল গাছ ছিলো ছেলেটি ফুল কুড়িয়ে মেয়েটির জন্য দাঁড়িয়ে থাকত।
মেয়েটিকে নিয়ে মামুর দোকানের ফুচকা খাওয়া রিক্সা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো এসব কিছুই চলছিল খুব ভালোভাবে। তারপর অনেক চড়াই-উতরাই পার করে তাদের বিয়ে হয়। মেয়েটির পরিবার রাজি হয়নি ছেলেটির কাছে বিয়ে দিতে, ছেলেটির পরিবার মেয়েটিকে বিয়ে করাবে না। সবার না-মানা-মানিতে এক সময় বিয়েটা তাদের হয় কিন্তু সংসার তাদের করা হয়ে ওঠেনি।
আজ তাদের পাঁচ বছরের সংসার জীবন কিন্তু ঠিক পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার দিন এই মেয়েটা আগের দিন রাতে কথা বলে ছেলেটিকে ডিভোর্স লেটার পাঠায় আর সেদিনই ছেলেটার চাকরি চলে যায়, আবার সেদিন এই ছেলেটার খুব কাছের একটা বন্ধুর বাবা মারা যায় ছেলেটা এত ধাক্কা সইতে পারেনি।
একটা সময় ছেলেটা নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। ছেলেটার সাথে কথা বলতে চাইলাম কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে ছেলেটা আমাকে তার জীবনের করুন কাহিনী গুলি বলল। তাদের সংসার জীবন হলো পাঁচ বছরের, তাদের বিয়ের মাসখানেক পর মেয়েটা বাবার বাড়ি চলে যায়, ছেলেটা ভাবতো আমি ওকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি ওকে সম্পূর্ন স্বাধীনতা দেওয়া উচিত, ছেলেটি মেয়েটিকে স্বাধীনতা দিল, মেয়েটি বাবার বাড়িতে থাকতো খুব একটা ছেলেটির বাড়িতে আসত না, ও হ্যাঁ আরেকটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম ছেলেটি ঢাকায় অনেক বড় একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে উচ্চ পদে চাকরি করতো। কিন্তু নতুন বিয়ে করেছে বউকে নিয়ে তো আর ঢাকায় থাকা পসিবল না হুট করেই। আর ছেলেটি তার বাবা মার একমাত্র ছেলে তাই স্বভাবতই সে তার বউকে নিয়ে ঢাকায় সেটেল হতে পারেনি। তাই সে চাকরি ছেড়ে দিল। তাও সে তার বউয়ের কাছাকাছি থাকবে কিন্তু মেয়েটি বেশিরভাগ সময়ই বাবার বাড়িতে কাটাতো।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থা টা এরকম মেয়েরা শ্বশুর বাড়িতে দিনের পর দিন থাকতে পারবে কিন্তু ছেলে-মানুষ শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে একদিনের বেশী তিন দিন থাকতে পারবে না, সেটাকে দৃষ্টিকটু দেখায় এটা আমাদের সমাজের সিস্টেম আর আমরা নিজেরাই এটাকে তৈরি করেছি আর আমরা নিজেরাই এটা মেনে চলি।
ছেলেটা প্রতিদিন তো আর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে থাকতে পারবে না, সমাজের চোখে সেটা দৃষ্টিকটু। আস্তে আস্তে তাদের মাঝখানে দূরত্ব আসতে শুরু হলো সেটা শুধু যোগাযোগের কারণে, কারণ ছেলেটা প্রতিদিন শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে থাকতো না আর মেয়েটা তার শ্বশুরবাড়িতে থাকতে চাইতো না। ছেলেটা মেয়েটাকে বোঝাত আমি তোমার জন্য চাকরি ছেড়ে চলে আসছি, শুধু তোমার কাছাকাছি থাকার জন্য এখন তুমি কেনো আমাদের বাড়িতে থাকবে না? আমি আমার বাবা মার একমাত্র ছেলে তারা আমাকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে মানুষ করেছে আমিও তো তোমাকে স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছি তাহলে কেন তুমি আমার সাথে থাকতে চাইবে না?
আমি তো তোমার বাড়িতে প্রতিদিন যেতে পারি না এটাতো সমাজের চোখে দৃষ্টিকটু। তখন মেয়েটা বলতো তুমি আলাদা বাসা নাও, তখন ছেলেটা বলতো এটা কি সম্ভব যেখানে আমার বাসা ভাড়া দিয়ে রাখসি সেখানে আমি অন্যের বাড়িতে বাসা ভাড়া গিয়ে থাকব।
তাছাড়া আমি আমার বাবা মার একমাত্র ছেলে। কিন্তু মেয়েটি বুঝলো না ছেলেটার সাথে সংসার করতে চাইল না। তাদের সংসার জীবনের পাঁচ বছরের মাথায় তাদের বিচ্ছেদ হলো তবে দুজনের মর্জিতে নয় একজনের ইচ্ছায় আরেকজনের অনিচ্ছায়।
ছেলেটি চেয়েছিল ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি গুলো রাখতে কিন্তু মেয়েটা তাকে সে সুযোগটা দেয়নি। অথচ তারাই একটা সময় ভালোবেসে একজন আরেকজনকে কত প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু সেগুলো আর কেউ রাখতে পারেনি।
ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি এমন হয় কেন মানুষগুলো এমন কেন প্রতিশ্রুতি দিয়ে কেন প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনা এত ঠুনকো ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি….?
মানুষ কেন বুঝেনা প্রিয়জন হারানোর শোক মৃত্যুর চাইতে ও কঠিন তার চেয়েও কঠিন প্রিয়জনকে অন্যের পাশে দেখা।
আপনারা প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখার চেষ্টা করুন ভালো রাখুন প্রিয়জনকে ভালবাসতে শিখুন।
লেখক-পরিচালক-প্রমীলা দাস প্রমী
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর।।