ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি।।
বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস ওমিক্রন ঢেউয়ের ধাক্কা লেগেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও। এরইমধ্যে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। ৩৩ লাখ মানুষের এই জেলায় একমাত্র ভরসা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল। এ হাসপাতালে প্রতিদিন আড়াই-হাজার মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে। হাসপাতালে আসা রোগী বা দর্শনার্থীরা মাস্ক ব্যবহারে সচেতন না।
ওমিক্রনের ভয়াবহতা ও বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে জেনারেল হাসপাতালের গেটে ও ভেতরে দাঁড়িয়ে মাস্ক বিক্রি করছে বৃদ্ধ-যুবক ও শিশু শিক্ষার্থীরা। মাস্ক বিক্রি থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই চলছে তাদের পরিবার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সামনের গিয়ে প্রতিদিনই এমন দৃশ্যই দেখা যায়।
এদের কারো বয়স ৬০ আবার কারো-বা ১০, যুবকদের একটু বেশি। কিন্তু এ বয়সেই সংসারের জোয়ালটা নিয়েছে নিজেদের কাঁধে।তারা মহামারী করোনাভাইরাস শুরু থেকেই মাস্ক বিক্রি করে আসছে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের গেটে ও ভেতরে। এখনও চলছে তাদের মাস্ক বিক্রির কর্মকাণ্ড। একই সাথে মাস্ক বিক্রি করছে আবার রোগী ও দর্শনার্থীদের মাস্ক পড়তে উদ্বুদ্ধ করছে তারা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের গেটের সামনে গিয়ে দেখা যায়, এখানে প্রতিদিনই একজন বৃদ্ধ, কয়েকজন যুবক ও ৩-৪ জন শিশু শিক্ষার্থী নিয়মিতভাবে মাস্ক বিক্রি করে। সারাদিন যেটুকু আয় হয়, তাই নিয়ে সংসার চালান তারা। শুক্রবার কম বিক্রি হলেও বাকি ছয়দিন মাস্ক বিক্রি করে ভাল আয় তাদের। ওই ছয়দিন তাদের মুখের হাসিতে উচ্ছসিত হয়ে থাকে জেনারেল হাসপাতাল এলাকা।
কথা হয় মাস্ক বিক্রিরত বৃদ্ধ ইসহাক মিয়ার সাথে। ইসহাক মিয়া জানান, সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটের গার্ড। করোনাভাইরাস শুরুর কিছুদিন পর ইন্সটিটিউট বন্ধ হয়ে যায়। ছেলেমেয়ে ও পরিবার নিয়ে বিপদে পড়েন। পরিবারে অভাব-অনটন বেড়ে যায়। সংসারের ছেলেমেয়ে লেখাপড়া ও ভরণপোষণ থেমে যায়। সেজন্য গার্ডের দায়িত্বের পাশাপাশি কয়েকজন যুবক ও শিশুদের মত তিনিও হাসপাতালে আগত রোগী ও দর্শনার্থীদের কাছে মাস্ক বিক্রি শুরু করেন। মাস্ক বিক্রিতেও থামেননি তার কর্মকান্ড। মাস্ক বিক্রির পাশাপাশি রোগী ও দর্শনার্থীদের মাস্ক পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি।
মাস্ক বিক্রির ব্যাপারে আলী নামের এক যুবক জানান, প্রতিদিন সরাইল থেকে এখানে এসে মাস্ক বিক্রি করি। আগে অটোরিকশা চালাতাম। অটোরিকশা চালিয়ে পরিবারে অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। সেজন্য মানুষের সেবা করার পাশাপাশি সদর হাসপাতালে এসে মাস্ক বিক্রি করি। প্রতি মাস্ক ৫টাকায় বিক্রি করি আবার মাস্ক পড়তে রোগী ও দর্শনার্থীদেরকে বলি।
দুটি মাস্ক বিক্রি হয় ১০ টাকা আবার ৫ টি মাস্ক বিক্রি হয় ২০ টাকা। এভাবে চলছে তাদের সংসার। তাদের আশাবাদ সরকার যদি তাদের সামান্য সহযোগিতা করত তাহলে তাদের পরিবার নিয়ে কোন রকমে বেঁচে থাকতে পারতো। কেননা প্রতিদিন বেঁচা-কেনা সমান হয় না তাই যেদিন বেঁচা-কেনা কম হয় সেদিন তাদের মারাত্মক অসুবিধার মধ্যে দিয়ে পার করতে হয়।
এছাড়াও হাসপাতালে কাজীপাড়ার ১০ বছর বয়সী আশিকুল ও পাইকপাড়ার ১২ বছর বয়সী পিয়াস নামের আরও দুই শিশু শিক্ষার্থী মাস্ক বিক্রি করে। তারা করোনাভাইরাসের আগে স্কুলে পড়তো। এখন অভাব-অনটনের কারনে আর পড়ালেখা হয়না।
এব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. ফাইজুর রহমান ফয়েজ জানান,
“নো মাস্ক নো সেবা” জেনেও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে কেউ সরকারের স্বাস্থ্যবিধি নীতিমালা ও মাস্ক ব্যবহার করে না। কেউ সচেতননা, জনসচেতনার কারনে করোনাভাইরাস আবার হানা দিয়েছে। কিছু মানুষ তার অভাব-অনটনের কারনে হাসপাতালে বাহিরে মাস্ক বিক্রি করে কোনরকম চলছে, ভেতরে বিক্রি করার সুযোগ নেই৷ তবে এসব সার্জিক্যাল মাস্ক করোনার জন্য তেমন নিরাপদ না। সবাই জোড়া সার্জিক্যাল মাস্ক পড়লে নিরাপদ।