অনলাইন ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়া হবে কি না তা আইনগতভাবেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। খালেদা জিয়ার জন্য আমি আমার নির্বাহী ক্ষমতা বলে যা করতে পারি তাই করেছি, আইন পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে।
’৭৫ এর বিয়োগান্তক অধ্যায় টেনে এনে জাতির পিতার খুনীদের পুরস্কৃত করার পরও তাঁর সরকার খালেদা জিয়াকে মানবতা দেখিয়েছে অভিমত ব্যক্ত করে সরকার প্রধান বলেন, আমার বাবা,মা, ভাই এমনকি ছোট্ট রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করেছে। তারপরও তাকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। কারণ আমরা অমানুষ নই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার বিকেলে সাম্প্রতিক স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬ এ অংশগ্রহণ এবং লন্ডন ও ফ্রান্সে দু-সপ্তাহের সফর বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন।
তিনি গণভবনে থাকা সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে সরাসরি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থাকা সাংবাদিকদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি এই প্রশ্নোত্তরপর্বে অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমার কাছে চান কিভাবে, খালেদা জিয়াকে যে বাসায় থাকতে এবং চিকিৎসা করার সুযোগ দিয়েছি সেটাই কি বেশি নয়।
প্রধানমন্ত্রী বারবার তাকে হত্যা প্রচেষ্টায় খালেদা জিয়া এবং তার পুত্র তারেক রহমানের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উত্থাপন করে উল্টো প্রশ্নকারী সাংবাদিককে প্রশ্ন করেন, আপনাকে কেউ হত্যার চেষ্টা করলে আপনি কি তাকে ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন? বা আপনার পরিবারকে কেউ হত্যার পর বিচার না করে সেই খুনীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করতো তাহলে কি করতেন?
‘৯৬ এর ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির পিতার খুনী রশিদকে সংসদ সদস্য করে বিরোধী দলের নেতার আসনে বসানো, জাতির পিতার অপর খুনী খায়রুজ্জামানকে তার বিচারের রায় হবার সময় নতুন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি দেওয়া এবং রাষ্ট্রদূত করা, মারা যাওয়া অপর খুনী পাশাকে মারা যাওয়ার পর প্রমোশন দিয়ে সবধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদানসহ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে তাকে হত্যা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর সেই গ্রেনেড তিনিই ভ্যানিটি ব্যাগে করে এনে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন, খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য এবং একইসঙ্গে কোটালিপাড়ায় বোমা পুঁতে রেখে তাকে হত্যা প্রচেষ্টার ঠিক আগে খালেদা জিয়ার বক্তব্য শেখ হাসিনা ‘প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা কোনোদিন বিরোধীদলের নেতাও হতে পারবে না স্মরণ করিয়ে দিয়ে খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, গ্রেনেড হামলায় দলের ২২ জন নেতাকর্মী মারা যাওয়া এবং বিপুল সংখ্যক আহত হওয়ার পরও একদিন সংসদে আলোচনা পর্যন্ত করতে না দেওয়ার সঙ্গে দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়ার রূপকার খালেদা জিয়াকে এতকিছুর পরও তার সরকার মানবতা দেখিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে প্রচলিত প্রবাদ ‘রাখে আল্লাহ মারে কে,’ উল্লেখ করে এর উল্টোটাও উচ্চারণ করেন, ‘মারে আল্লাহ রাখে কে?’ ‘কাজেই খালেদা জিয়ার জন্য যারা তাকে দয়া দেখাতে বলেন তাদের লজ্জা পাওয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি ’৭৫ এর সেই বিয়োগান্তক অধ্যায়ও টেনে আনেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন অন্যান্যের মধ্যে গণভবনে উপস্থিত ছিলেন। প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণভবন থেকে সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন।