অনলাইন ডেস্ক:
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের ইয়াবা কারবারি হারুন মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাবন্দি। কারাগারেই তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় স্থানীয় যুবদলকর্মী মাসুমের। তাঁরা জামিনে ছাড়া পেয়ে একসঙ্গে শুরু করেন অনলাইনে ইয়াবা কারবার। এই কারবারের মাধ্যম হারুনের গোপন মোবাইল ফোন নম্বরে ব্যবহার করা ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন অ্যাপস। গত ৫ মার্চ ডবলমুরিং থানার পুলিশ দুজনকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারের পর পেয়েছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।
ওই থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে ইমো কিংবা অন্যান্য অ্যাপ ব্যবহার করে তারা ইয়াবাসেবীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। দরদাম ঠিক হলে ইয়াবা দেয়। মোবাইল ফোনের তথ্য নিয়ে জানা গেছে, তারা একটি সংঘবদ্ধ ইয়াবা পাচারকারী দলের সদস্য।’
গত বছরের মে মাসে ‘ওয়েড লাভারস’ নামের ১৫ হাজার সদস্যের একটি ফেসবুক গ্রুপ চিহ্নিত করে ঢাকার র্যাব। এই গ্রুপে প্রকাশ্যে গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সেবন ও বিক্রির প্রচার চালানো হচ্ছিল। গ্রুপের দুই অ্যাডমিনকে গ্রেপ্তার করেন র্যাব কর্মকর্তারা।
এভাবেই প্রকাশ্যে সামাজিক মাধ্যমে বা গোপন অ্যাপে ইন্টারনেট যোগাযোগের মাধ্যমে মাদকের কারবার চলছে। মাদকের স্পটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান ও নজরদারির কারণে কারবারিরা ঝুঁকছেন অনলাইনে। নেটদুনিয়ার গোপন যোগাযোগের কৌশল ডার্কনেটও ব্যবহার করছেন মাদক কারবারিরা।
২০১৮ সাল থেকে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার হলে এমন তৎপরতা বেড়েছে বলে দাবি করছে পুলিশ, র্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কয়েকটি সূত্র। তবে মাদকবিরোধী অভিযানে প্রয়োজনীয় সাইবার নজরদারি নেই কোনো সংস্থারই। সাইবার দলের নজরদারি তো দূরের কথা, মোবাইল ফোন ট্র্যাক করার যন্ত্রও নেই প্রধান সংস্থা (নোডাল এজেন্সি) ডিএনসির। ফলে আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে অনলাইনে মাদক কারবারিদের জাল (নেটওয়ার্ক) কোনোভাবেই ভেদ করতে পারছেন না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ ও তদন্তের জন্য মোবাইল ফোন ট্র্যাকার দাবি করে আসছে এই সংস্থাটি। ট্র্যাকার না দেওয়া হলেও জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (এনটিএমসি) চলতি সপ্তাহ থেকে অন্য সংস্থার মতোই ডিএনসির কর্মকর্তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রামে সাইবার শাখা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), র্যাবসহ বিভিন্ন ইউনিটের সাইবার ক্রাইম শাখা থাকলেও সেখান থেকে জঙ্গি, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড, সংঘবদ্ধ অপরাধই বেশি তদারকি করা হয়। মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য নেই আলাদা সাইবার দল। র্যাবের অভিযানে এখন বেশি মাদক উদ্ধার হচ্ছে, যার বেশির ভাগ মোবাইল ফোন ও অনলাইন যোগাযোগ নজরদারির মাধ্যমে হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।
এ ব্যাপারে ডিএনসির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার বলেন, ‘মাদকপাচারকারীরা এখন মোবাইল ফোন ও অনলাইনে যোগাযোগ করে। তাদের অবস্থান নিশ্চিত এবং গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য মোবাইলে ফোন ট্র্যাকার ও সাইবার ইউনিট প্রয়োজন। এগুলো নিয়ে কাজ চলছে। এনটিএমসিতে আমরা প্রতিনিধি দিতে পেরেছি। সবার আগে অস্ত্র ও ডগ স্কোয়াড নিয়ে ভাবছি আমরা।’
ডিএনসি সূত্র জানায়, গত ২৭ ডিসেম্বর জাতীয় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির প্রথম সভায় মোবাইল ট্র্যাকার ও অনলাইন নজরদারির বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। ওই সভায় তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে মাদক কারবারিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য এনটিএমসির কার্যালয়ে ডিএনসির তিনজন কর্মকর্তাকে পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা মোবাইল ফোনে নজরদারি করে মাদকদ্রব্য ধরার চেষ্টা করবেন। এনটিএমসি হলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অধীন একটি অধিদপ্তর। সংস্থাটি সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে টেলিযোগাযোগ সম্পর্কিত দিকনির্দেশনা, পর্যবেক্ষণ ও অন্যান্য সরকারি সংস্থাকে যোগাযোগসংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহায়তা করে।
এ ব্যাপারে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘মাদকের ব্যাপারে আমাদের সব ধরনের নজরদারি আছে। সে নজরদারি থেকেই চালান ধরা পড়ছে।’
২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি জিগাতলায় মুয়াম্মার রশিদ নামে এক যুবকের আইস তৈরির ল্যাবের খোঁজ পায় ডিএনসি। ওই বছরের ২৮ জুন ভাটারা থেকে আজাহ আনাইওচুকোয়া ওনিয়েনসি নামে এক নাইজেরিয়ানকে ৫০০ গ্রাম আইসসহ গ্রেপ্তার করে একই সংস্থা।
অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মোসাদ্দেক হোসেন জানান, ইন্টারনেটের মাধ্যমে আইসের বেচাকেনা হচ্ছে। ডার্কনেটে রশিদ দেশে আইসের বাজার তৈরির চেষ্টা করছিলেন বলেও তথ্য মিলেছে।