স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার:
বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ী দ্বীপ মহেশখালী। এই দ্বীপ দেখার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক মানুষ ভ্রমণে আসেন। অথচ এই দ্বীপেই নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পাহাড়, বনের গাছ, অবৈধ ভাবে খাল থেকে তোলা হচ্ছে বালি। যার কারণে পরিবেশের উপর চরম প্রভাব পড়ছে। আর এসব কাজে স্বয়ং জড়িত ইউএনও’র ব্যক্তিগত গাড়ি চালক আবু বক্কর। – তথ্য যথাযথ সূত্রের।
সূত্র জানায়, অভিযুক্ত আবু বক্করের বাড়ি মহেশখালী পৌরসভার পুটিবিলা খুইশ্যামার পাড়া গ্রামে। সে ওই গ্রামের মৃত বাদশা মিয়ার পুত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউএনও’র গাড়ি চালক আবু বক্কর দুই বছর আগে বিদেশ গিয়েছিল। সেখান থেকে অল্প দিনের ভেতরে ফের রহস্যজনক ভাবে দেশে ফিরে আসে। দেশে ফেরার পর তখন মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সরকারী গাড়ি চালক না থাকায় আবু বক্করকে মাস্টাররোলে চালক হিসেবে নিয়োগ দেয়।
এদিকে মাস্টারোলে চাকরিতে ইউএনও’র গাড়ি চালক আবু বক্কর মাসিক ১২ হাজার টাকা বেতন পান বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসনের একটি সূত্র।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ইউএনও’র ব্যাক্তিগত গাড়ি (সরকারী গাড়ী) চালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠে চালক আবু বক্কর। আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়ার মতোই টাকার পাহাড় গড়ে উঠতে থাকে তার। পাহাড় ও বন খেকোদের সাথে আঁতাত করে গড়ে তোলে নিজস্ব একটি আলাদা অপরাধ চক্র। রাতারাতি নিজেও পাহাড় কাটা চক্রের অন্যতম হোতা বনে যায়। মূলতঃ এসব অবৈধ কাজে উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব থাকে আবু বক্করের উপর।
অপরদিকে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য। তথ্য বলছে, দেড় বছর আগে টাকার অভাবে চাকরি খোঁজা আবু বক্কর এখন ২২ লাখ টাকা দামের দুটি ডাম্পার গাড়ির মালিক। সেই গাড়ি গুলো রাতের অন্ধকারে পাহাড় কেটে, সরকারী ছড়া সেচে বালি ও মাটি এনে বিভিন্ন স্থানে পাচার ও বিক্রি করছে অনায়াসে। আর এসব কাজ করা হয় লোকচক্ষুর আড়ালে গভীর রাতে।
স্থানীয়রা জানান- মহেশখালীতে চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বালি, মাটি, ইট, গাছ সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম সরবরাহের কাজে দুটি ডাম্পার গাড়ি ব্যবহৃত হয়। এই দুটি ডাম্পার গাড়ি ইউএনও নিজে কিনে তার ব্যক্তিগত গাড়ী চালকের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন বলেও একাধিক সুত্র মনে করছেন। কিছু কিছু সূত্র এসব গাড়ি খোদ ইউএনও কিনে ড্রাইভারের মাধ্যমে তদারকি করছেন বলে মনে করেন। তবে গাড়ি কেনা সংক্রান্ত কাগজপত্র সৃষ্টি করা হয় ড্রাইভার আবু বক্করের নামে, যদিওবা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউএনও মুহাম্মদ ইয়াছিন।
ইউএনও’র নাম ভাঙ্গিয়ে মহেশখালীতে দুটি ডাম্পার চলছে নিশ্চিত করে অন্যান্য ডাম্পার চালক ও মালিকরা জানিয়েছেন- ইউএনও’র ব্যক্তিগত গাড়ি চালক আবু বক্কর গাড়ি দুটি পরিচালনা করেন। তার নিজের বাড়ির সামনে গাড়ির গ্যারেজও তৈরী করেছে সে।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ব্যক্তিগত গাড়ি চালক আবু বক্কর জানান, গাড়ি দুটো তিনি কিনেছেন। টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দেয়নি।
এদিকে চালক আবু বক্কর ২২ লাখ টাকা দিয়ে ডাম্পার গাড়ি কিনেছে এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এত কম সময়ে আবু বক্কর কিভাবে এত টাকার মালিক হলো সেই প্রশ্ন সবার কাছে!
অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ইয়াছিন জানিয়েছেন, গাড়ি চালক আবু বক্করের নামে দুটি ডাম্পার গাড়ি আছে তিনি জানেননা। তবে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো জানান, মুজিব বর্ষের ঘর নির্মাণের মালামাল পরিবহনের জন্য তিনি চালক আবু বক্করকে দুটি গাড়ি ব্যবস্থা করতে বলেন। সেই গাড়ি দুটোই সড়কে চলছে। তবে গাড়ি গুলো পাহাড়ের মাটি, বালি, গাছ পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা সেসব বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।