স্টাফ রিপোর্টার :
ছয়টি বর্ণমালা, একটি ি কার ও একটি ু কারের গাঁথুনির সমন্বয়ে ‘মণিরামপুর’ বানান। তবে, মণিরামপুরের বাংলা ও ইংরেজি নির্ভুল বানান নিয়ে রয়েছে বিভ্রান্তি, বিড়ম্বনা, অসঙ্গতি ও উদাসীনতা। খেয়াল করলে সহজেই চোখে পড়বে, উপজেলা পরিষদের প্রবেশ মুখের; দক্ষিণ ও উত্তর গেইটে মনিরামপুর বানানে (ন) ব্যবহৃত হয়েছে, আবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের কার্যালয়ের মেইন ফটকের ওয়াল সাইনবোর্ডে মণিরামপুর (ণ) ব্যবহার করা হয়েছে। একই স্থানে দুই রকম বানানের ব্যবহার রীতিমতো সচেতন নাগরিকদেরকে বিড়ম্বনায় ফেলছে। জনমনে প্রশ্ন উঠছে কোনটি সঠিক? এমনকি সচেতন মহলের অনেকেই বলছেন মণিরামপুর বানান কি ভুলের শিকলে বন্দি?
ইংরেজিতেও মণিরামপুর বানান দুই ধরনের, Monirampur/Manirampur! একটি উপজেলার নাম, বাংলা ও ইংরেজি বানানে সঙ্গতিহীনতা কতটুকু যুক্তিসংগত? বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল ও সর্ববৃহৎ উপজেলার একটি মণিরামপুর। অধিক গুরুত্বপূর্ণ এই জনপদের নামের বানান কেন দুই চরিত্র ধারণ করে; ভুলের বৃত্তে আবদ্ধ থাকবে যুগ থেকে যুগান্তর? সবকিছু যখন এগিয়ে, ঠিক সেই সময়ে আমরা কেন ভুল বহন করে পিছিয়ে থাকবো? প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তাদের নিজ জন্মস্থানের নামের বানানটি কোনটি সঠিক, এই প্রশ্নের ঘুরপাকে থাকবে কেন ?
উপজেলা প্রশাসনের আওয়াতাধীন সব অফিসের প্রত্যেকটা মেইন সাইনবোর্ডে মণিরামপুর বানানে ণ ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি উপজেলা প্রশাসনের বাস্তবায়নে নির্মিত- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুর্যাল ও মণিরামপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ফলকেও মণিরামপুর বানানে ণ ব্যবহার করা হয়েছে। উপজেলা শহরে শুধুমাত্র মণিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেইন সাইন বোর্ডে ন ও ণ দুইটার-ই ব্যবহার হয়েছে। তবে তাঁদের অন্যান্য প্রকাশনী ও প্রোগ্রাম ব্যানারগুলিতে ণ এর ব্যবহার হয়ে থাকে, এছাড়া মণিরামপুর থানা গেইটে ন দিয়ে মণিরামপুর বানান সম্পন্ন করা হয়েছে।
মণিরামপুর বানানে যেসব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ণ দিয়ে থাকেন: মণিরামপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ, মণিরামপুর সরকারি কলেজ, মণিরামপুর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, মণিরামপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, মণিরামপুর ফাজিল মাদ্রাসা, মণিরামপুর আদর্শ বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মণিরামপুর আদর্শ সম্মিলনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মণিরামপুর পাবলিক লাইব্রেরী, মণিরামপুর প্রভাতী বিদ্যাপীঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মণিরামপুর পৌরসভা, মণিরামপুর প্রেসক্লাব, মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ, মণিরামপুর উপজেলা বিএনপি, মণিরামপুর উপজেলা জাতীয় পার্টি, মণিরামপুর উপজেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর সদর দপ্তর, মণিরামপুর ভূমি অফিস, মণিরামপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন, মণিরামপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট মণিরামপুর উপকেন্দ্র, বিআইডব্লিউটিএ (আবহাওয়া অফিস), মণিরামপুর শিল্পকলা একাডেমি, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস, উপজেলা মৎস্য অফিস, উপজেলা কৃষি অফিস ও সোনালী ব্যাংকসহ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হয়েও কেন নিজের নামের বানান তার বুকে ভুল হয়ে শোভা পাবে ? মণিরামপুর উপজেলাকে কেন বার বার গুরুত্বপূর্ণ বলে সঙ্গায়িত করছি- বাংলাদেশে প্রথম ডিজিটাল উপজেলা, সতেরটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা। বাংলাদেশের প্রথম ভাসমান ব্রিজ স্থাপন হয় এখানে। এ মাটিতে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ পায়ে সাইকেল চালিয়ে এ মাটিকে ধন্য করেছেন। দুইটি সরকারি হাইস্কুল, একটি সরকারি কলেজ, বিআইডব্লিউটিএ (নদী পথের আবহাওয়া অফিস), পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট উপকেন্দ্র, পল্লী বিদ্যুৎ সদর দপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট), প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উপজেলা পর্যায়ে একটি রিসোর্স সেন্টার, বীজ গবেষণা, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, শহীদ মশিউর রহমান অডিটরিয়াম, মণিরামপুর পাবলিক লাইব্রেরীসহ উপজেলা ভিত্তিক সর্বাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এখানে।
১৯৫৪ সালে খুলনা বিভাগের প্রথম নম:শূদ্র মন্ত্রী শরৎচন্দ্র মজুমদার, বৃটিশ সরকারের মিনিস্টার পদে উত্তীর্ণ হওয়া- ডাক্তার জীবন রতন ধর, বাংলাদেশের সুপ্রাচীন- যশোর পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান নীল রতন ধর, ১৯৫৪ সনে যুক্তফ্রন্টের এমএলএ ডা: আহাদ আলী খান, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে জুনিয়র আইনজীবি হিসাবে দায়িত্বপালনকারী ও ১৯৭৩ সনের সংসদ সদস্য এড. নুরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলনকারী সাবেক সংসদ সদস্য এড. খান টিপু সুলতান, বর্তমান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী বাবু স্বপন ভট্টাচার্য্য, আওয়ামীলীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী প্রেসিডিয়াম ফোরামের অন্যতম সদস্য বঙ্গবন্ধুর আস্থায় ভরা ব্যক্তিত্ব পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, সাবেক সফল শিক্ষা সচিব ও ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম রূপকার ড. নজরুল ইসলাম খান, আধুনিক জাতীয় পরিচয় পত্রের অন্যতম রূপকার বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক জেমস্ আব্দুর রহিম রানা, বিশ্বখ্যাত আলেম ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুফতি মুহাম্মদ ওয়াককাস, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আব্দুস সাত্তার, বিশ্বখ্যাত উপস্থাপক, লেখক ও সাহিত্যিক দিলারা হাশেম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)’র বোর্ড অব ডিরেক্টর ও সিনিয়র সাংবাদিক মধুসূদন মন্ডল, একাধিক বইয়ের লেখক ও দৈনিক দিনকাল পত্রিকার সহকারী সম্পাদক মোহন হাসান খান, তরুণ প্রজন্মের দেশসেরা প্রচ্ছদ শিল্পী চারু পিন্টু, স্বাধীনতাকামী পাঁচ সূর্যসন্তান খ্যাত আসাদ, তোজো, শান্তি, মানিক, ফজলু, দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য, শহীদ শেখ আকরাম, বরেণ্য আলেম মাওলানা আলী হায়দার ও মাওলানা শামছুদ্দীন বুলবুলি এ মাটির সন্তান। এভাবে অসংখ্য তারকাখ্যাত কৃর্তিমানদের নাম লেখা যাবে, কিন্তু শেষ হবেনা। মণিরামপুরের মাটি অধিক উর্বর মাটি, এখানে অগণিত ক্ষণজন্মা সময়ের সাহসী নায়কদের জন্ম হয়েছে।
মণিরামপুরের সাংবাদিক সমাজ, শিক্ষক সমাজ, ব্যবসায়ী সমাজ, সাহিত্য সাংস্কৃতিক অঙ্গন, রাজনৈতিক অঙ্গন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালতের প্রকাশনী, অফিস সাইনবোর্ড, অনুষ্ঠান ব্যানারসহ সকল প্রকার লেখনীতে সর্বত্রভাবে মণিরামপুর বানানে ণ এর ব্যবহার সর্বাধিক। প্রত্যেকটা সচেতন নাগরিকদের কাছে তার নিজ উপজেলা অধিক আবেগ, অনুভূতি ও প্রিয় হয়ে থাকে, যা সবার হৃদয়ে পাথরে খোদাই করার মতো স্থান পায়।মণিরামপুরের নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে যে বোদ্ধাজনেরা আমাদের মাথার তাজ হয়ে আছেন তাঁদের কাছে আমাদের সবিনয়ে আবদার, মণিরামপুর বানানটি (বাংলা ও ইংরেজি) দুই ধরনের বানান লেখার কবল থেকে মুক্ত করুন। আপনাদের সহযোগিতায় আমরা মণিরামপুরবাসী নির্দিষ্ট একটা বানানে মণিরামপুরের নামটাকে গৌরবের সাথে লিখতে চাই।এ দাবিকে বাস্তবায়নে বিশেষ করে শ্রদ্ধার সাথে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি- স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী বাবু স্বপন ভট্টাচার্য্য, মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জনাবা নাজমা খানম, মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান, মণিরামপুর পৌরসভার সম্মানিত মেয়র আলহাজ্ব অধ্যক্ষ কাজী মাহমুদুল হাসান স্যার, সরকারি দল, সকল বিরোধী দল, মণিরামপুর প্রেসক্লাবসহ সকল পর্যায়ের সাংবাদিক, শিক্ষক সমাজ ও সংস্কৃতিকর্মীগণদের প্রতি।
মণিরামপুর বানানটি শুদ্ধ চাই, এ যৌক্তিক দাবিতে মণিরামপুরের সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে আওয়াজ তোলার আহ্বান করছি।“আমাদের মণিরামপুর আমাদের গর্ব, আমাদের মণিরামপুর আমাদের অহংকার, আমাদের মণিরামপুর আমাদের উন্নয়ন”