উপজেলা (মণিরামপুর) প্রতিনিধি:
যশোরের মণিরামপুর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা – মৃত ঈমান আলী মহলদারের ছেলে মো: শহিদুল ইসলামের ওয়ারিশ সনদ জাল জালিয়াতির অভিযোগে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মনিরামপুর আমলী আদালত, যশোরে একটি মামলা হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, মণিরামপুর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা – মৃত ঈমান আলী মহলদারের ছেলে মো: শহিদুল ইসলাম মহলদার ২ স্ত্রী, ১পুত্র ও ৩ কন্যা রেখে ২১ মে ২০২০ ইং তারিখে হৃদক্রিয়া বন্ধজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন । মৃত শহিদুল ইসলামের ওয়ারিশ সনদ জাল জালিয়াতি করে ২০ ফেব্রুয়ারি ২৩ ইং তারিখে মণিঃ/পৌরঃ ওয়ারিশ-(৩৭৫)/৪-৩৬/২০২২- ১৭৪ নং স্মারকে ২য় স্ত্রী মোছা:রুমিছা বেগমকে স্বামীর ত্যাক্ত সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত করিবার হীন, সুপরিকল্পিত উদ্দেশ্যে ওয়ারিশ হইতে বাদ দিয়া মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে একটি জাল, তঞ্চকী ও ভুয়া ওয়ারেশকায়েম সনদ প্রদান করেন কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরী।
জানা যায়, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ইং তারিখ সকালে মৃত শহিদুল ইসলামের ২য় স্ত্রী মোছা:রুমিছা বেগমকে বাদ দিয়ে ওয়ারিশ সনদ দেওয়ার জন্য কাউন্সিলরের বাড়িতে বসে ১ম স্ত্রী মরিয়ম বেগম ও কন্যা রূপালী বেগমের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নেন তিন নাম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাউন্সিলরের এক সহযোগী। স্থানীয় ভাবে আরো জানা যায়, মৃত শহিদুল ইসলামের ঔরসে ১ম স্ত্রী মরিয়ম বেগমের ১ কন্যা রূপালী বেগম। মৃত শহিদুল ইসলামের ঔরসে ২ য় স্ত্রী মোছা:রুমিছা বেগমের ১ পূত্র ও ২ কন্যা তারা হলেন,মোঃ শাহাজান শাকিল( পুত্র), মোছাঃ শিউলী বেগম (কন্যা) মোছাঃ শিল্পী খাতুন (কন্যা)।
বর্তমানে ওয়ারিশ সনদ নিতে গেলে ওয়ারেশ গনের ভোটার আইর্ডি কার্ড অথবা জন্ম নিবন্ধনের সাথে মিল করে নাম, ঠিকানা সহ আইডি কার্ডের নাম্বার দিয়ে ওয়ারিশ সনদ দিতে হয়। এসব নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করেই কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরী জাল জালিয়াতি করে ভুয়া ওয়ারিশ কায়েম সনদ প্রদান করে। প্রদানকৃত ভুয়া ওয়ারিশ সনদে দেখা যায়, ১ম স্ত্রী, ১পুত্র ও ৩ কন্যার নাম। ২য় স্ত্রীর নাম বাদ দিয়ে ক্ষান্ত হননি কাউন্সিলর। শহিদুল ইসলামের একমাত্র পুত্র মোঃ শাহাজান শাকিলের নামের আগে মোছা: বসিয়ে লিখেছেন মোছা:শাহাজান আলী।
মণিরামপুর পৌরসভা কর্তৃক প্রদত্ত মো:শহিদুল ইসলামের মৃত্যু সনদে দেখা যায় দুই স্ত্রীর নাম।
এ বিষয়ে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মনিরামপুর আমলী আদালত, যশোরে মৃত মো:শহিদুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী মোছা:রুমিছা বেগম বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন । মামলা নং–CR-933/23। মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামীরা হলেন (১) মোছাঃ মরিয়ম বেগম (৫২)জং- মৃত শহিদুল ইসলাম মহলদার ২) মোছাঃ রুপালী বেগম (৩২) পিং- মৃত শহিদুল ইসলাম মহলদার ৩) বাবুলাল চৌধুরী (৪৫) পিং- বিমল চৌধুরী সর্বসাং-মনিরামপুর (০৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ), (৪) মোঃ কামরুজ্জামান (৫২) (প্যানেল মেয়র) পিং- মৃত গোলাম মোস্তফা।৩ অক্টোবর ২৩ইং মামলাটি মনিরামপুর আমলী আদালত আমলে নিয়ে পি বি আই কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে সংবাদ কর্মীরা শাহাজান শাকিলের নিকট জানতে চাইলে বলেন,কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরী তদন্ত ছাড়াই এই ভুয়া ওয়ারিশ সনদ দিয়েছেন। আমার কাছে কোন কিছুই জানতে বা জিজ্ঞাসা করেননি। ওয়ারিশ সনদে আমার নামের আগে মোছা: লাগিয়ে দিয়েছেন এবং নামের শেষে আলী, আমার নাম মো:শাহাজান শাকিল আর ওয়ারিশ সনদে দিয়েছেন মোছা: শাহাজান আলী। আমার নামটাই বদলে দিয়েছেন, আমাকে মেয়ে বানোনোর চেষ্টা করেছেন কাউন্সিলর। আমি প্রত্যাশা করি, আইনি প্রক্রিয়ায় দ্রুততম সময়ের মধ্যেই বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হবে।
এ বিষয়ে ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরী বলেন,আমার জানা মতে আমি কোন ওয়ারিশ কায়েম দেইনি। ওয়ারিশ কায়েমের ঝামেলা চলছিলো। এই নিয়ে মেয়র সাহেবের সাথে আমার বৈঠক হয়েছে। আর নামের যদি কোন ভুল থাকে তারাই নিজেরা লিখেছে। তারাই ভুল লিখেছে, আমার জানা মতে আমি কারোর ওয়ারিশ দেইনি এখনো পর্যন্ত । আমার জানা মতে আমি ওয়ারিশ দেইনি। ওয়ারিশ এর কপি দেখাক তারা। প্রথমে অস্বীকার করলেও ওয়ারিশ সনদে আপনার স্বাক্ষর আছে এমন প্রশ্নে বলেন, দেখতে হবে ওয়ারিশ কায়িমি দিছি কিনা দেখতে হবে, আর যদি দিয়ে থাকি ওর (মো: শাহাজান শাকিলের) মা বাদ ছিলো। আমি পাড়ায় খোঁজ নিয়েছিলাম শাহাজানের মা নাকি তালাক প্রাপ্ত ছিলো। যদি দিয়ে থাকি তবে কবে কখন দিছি মনে নেই।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র–১ মো:কামরুজ্জামানের ০১৭১৯-৯১৫০০৮ এই নাম্বারে একাধিক ফোন করলেও রিসিভ করেন নি।
এ বিষয়ে মণিরামপুর পৌরসভার মেয়র কাজী মাহমুদুল হাসান বলেন, ফাইল দেখতে হবে, ফাইল না দেখে কিছু বলতে পারবো না। ফাইল দেখে সঠিক তথ্যটা দিতে পারবো।