দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। আজ রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ শেষে এখন চলছে গণনা। ভোটগ্রহণ শুরুর পর বিকেল ৩টা পর্যন্ত সারা দেশের ভোটকেন্দ্রগুলোতে ২৭.১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছে ইসি।
এ দিকে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রার্থীরা।
এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে সাতটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বাতিল করা হয়েছে।
এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে ভোট গ্রহণ হয়। একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনের ভোট গ্রহণ বাতিল করা হয়। রাতের মধ্যে এসব আসনে ভোটের ফলাফল আসতে শুরু করবে।
প্রায় দুই হাজার প্রার্থী এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, বিকেল ৩টা পর্যন্ত সারা দেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আটটি বিভাগে মোট ভোট পড়েছে গড়ে ২৭ ভাগ। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৫, চট্টগ্রামে ২৬, সিলেটে ২২, বরিশালে ৩১, খুলনায় ৩২, রাজশাহীতে ২৬, ময়মনসিংহে ২৯ এবং রংপুর বিভাগে ২৬ শতাংশ ভোট পড়েছে।
তিনি জানান, সারা দেশে মোট সাতটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বাতিল করা হয়েছে।
জাল ভোট বা জাল ভোট প্রদানে সহায়তা করার কারণে ১৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি বা দণ্ড প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুরে একজন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আছেন এবং যাঁরা জালভোট দিতে গেছেন তাঁরাও আছেন। নতুনভাবে ভোটগ্রহণ বাতিল করা হয়েছে নরসিংদীর দুটি এবং কক্সবাজারের দুটি কেন্দ্রে।
বিভিন্ন কেন্দ্রে সংঘাত-সংঘর্ষের প্রশ্নের জবাবে জাহাংগীর আলম বলেন, ‘সারা দেশে অন্তত ৩৫টি জায়গায় ভোটকেন্দ্রের বাইরে ধাওয়া-পালটাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ছোটখাটোভাবে ৩০ থেকে ৩৫ জায়গায় ভোটকেন্দ্রের বাইরে ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
কোথাও আমাদের পুলিশ অফিসারের গাড়িতে ইট মেরে গাড়ির গ্লাস ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কোথাও ভোটকেন্দ্রের বাইরে ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়েছে।’
এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আছেন ২৬৫টি আসনে। দলটির ব্যানারে না থাকলেও দলটির ২৬৯ জন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। ইসির হিসাবে, সব দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট প্রার্থী আছেন ১ হাজার ৯৬৯ জন। অবশ্য এর মধ্যে কেউ কেউ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
গত বছরের ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি। ঘোষণা অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা, প্রার্থিতা প্রত্যাহার, প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচার-প্রচারণা শেষে আজ সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে।
তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর শুরু হওয়া নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টায়। এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে মূলত আওয়ামী লীগ ও দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে। নির্বাচনে থাকা জাতীয় পার্টি ও বাম দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা হলেও আসনগুলোতে আছে স্বতন্ত্র প্রার্থী। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের সঙ্গে স্বতন্ত্রের সংঘাত হচ্ছে বেশি। এরই মধ্যে হতাহত হয়েছে অনেকে।
মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ১৫৭। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৫ লাখ ৯২ হাজার ১৬৯। আর নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার ১৪০। হিজড়া ভোটারের সংখ্যা ৮৪৮। নির্বাচন কমিশনের মোট নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪৪। এর মধ্যে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ২৮টি রাজনৈতিক দল। বিএনপিসহ নিবন্ধিত বাকি দল এবং আরও কিছু বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করেছে।