অনলাইন ডেস্কঃ
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাঁধে ধরলেন। তারপর বললেন, ‘তুমি দুনিয়ায় এমনভাবে থাকো, যেন তুমি একজন বিদেশি অথবা মুসাফির।’ ইবনে ওমর (রা.) বলতেন, ‘যখন সন্ধ্যায় উপনীত হবে তখন সকালের জন্য অপেক্ষা কোরো না। আর যখন তোমার সকাল হয় তখন সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষা কোরো না। অসুস্থ হওয়ার আগে তোমার সুস্থতাকে আর তোমার মৃত্যুর জন্য জীবনকে কাজে লাগাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪১৬)
আলোচ্য হাদিসে মহানবী (সা.) জীবনের সময় ও সুযোগকে ভালো কাজে ব্যবহারের উৎসাহ দিয়েছেন। হাদিসবিশারদরা বলেন, মানবজীবনকে অর্থময় করে তোলার একটি উপায় হলো ভালো ও পুণ্যের কাজে উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা এবং তা পূরণে সর্বাত্মক চেষ্টা করা। যেমনটি পূর্বসূরি আলেমরা ও নেককার মানুষরা করতেন। প্রতিদিন তাঁরা চেষ্টা করতেন আগের দিনের তুলনায় ভালো কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) রাতে উঠে অজু করতেন এবং নামাজ পড়তেন। তারপর ঘুমাতেন পাখির ঘুমের মতো সামান্য সময়; তারপর উঠতেন, অজু করতেন এবং নামাজ পড়তেন। তারপর ঘুমাতেন পাখির ঘুমের মতো; তারপর উঠতেন ও নামাজ পড়তেন। এরূপ বার বার করতেন। (মিনহাজুল কাসেদিন : ৪/১৫৯)
উমাইর ইবনে হানি (রহ.) নিজের জন্য প্রতিদিন এক লাখবার তাসবিহ পাঠ আবশ্যক করে নেন। (আল মুদহিস : ১/৩৭০)। আবু বকর ইবনে আয়াশ (রা.) বলেন, ‘আমি এই ছোট মসজিদে ১৮ হাজারবার কোরআন খতম করেছি।’ (আল ইসতিদাদু লিল-মাওতি ওয়া সুয়ালুল কাবরি : ১/৬)
ভালো কাজে উচ্চ লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা পূরণ করা সম্ভব হবে শুধু সুস্থ থাকা অবস্থায়। মানুষ যদি তার জীবদ্দশায় ও সুস্থ অবস্থায় ভালো কাজে আত্মনিয়োগ না করে, পরকালে তাকে লজ্জিত হতে হবে। তখন আফসোস করে বলবে,
‘যাতে কাউকে বলতে না হয়, হায়! আল্লাহ তাআলার প্রতি আমার কর্তব্যে আমি যে শৈথিল্য করেছি তার জন্য আফসোস! আমি তো ঠাট্টাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।’ (সুরা জুমার, আয়াত : ৫৬)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তাদের কারো মৃত্যু এসে যায় তখন সে বলে, হে আমার প্রতিপালক, আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে) প্রেরণ করেন; যাতে আমি ভালো কাজ করতে পারি যা আমি করিনি। কখনোই নয়, এ তো তার একটি উক্তি মাত্র, তাদের সামনে পর্দা আছে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৯৯-১০০)
আর মুমিন যখন আত্মোন্নয়নের চেষ্টা করতে থাকে এবং প্রতিদিন নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তখন তার জীবন অর্থময় ও মূল্যবান হয়ে ওঠে। সাঈদ ইবনে জাবের (রহ.) বলেন, ‘মুমিনের প্রতিটি বেঁচে থাকার দিনই লাভজনক।’ (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ১/৩৮৬)