ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের একটি বাসা থেকে অপহরণের শিকার হওয়া একজন ভারতীয় নাগরিক ও এক বাংলাদেশি প্রথম শ্রেনীর ঠিকাদারকে অপহরণকারীদের কবল থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। অপহরণকাণ্ডের সাথে জড়িত দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লোকমান হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে চারটি ককটেল ও ককটেল তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার রামরাইল ইউনিয়নের বিজেশ্বর গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে আব্দুল মতিন ওরফে ইয়াম (২১) ও একই গ্রামের স্বপন ভূঁইয়ার ছেলে ইফতেখার ভূঁইয়া রবিন (২২)।
গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, অপহরণের শিকার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের বাসিন্দা ঠিকাদার মোবারক হোসেন ও আশুগঞ্জ-আগরতলা চার লেন সড়ক প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস-এ কর্মরত ভারতীয় নাগরিক মিন্টু রঞ্জন দাস গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কলেজপাড়ার একটি ফ্ল্যাটে যান। সেখানে এক নারী ও কয়েকজন যুবক মিলে তাদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ করেন। অপহরণের পর তাদেরকে বিবস্ত্র করে আপত্তিকর ছবি তুলতে বাধ্য করা হয়। অপহরণকারীরা তাদের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।
অভিযান পরিচালনাকারী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. রইছ উদ্দিন জানান, কলেজ পাড়ার ওই ফ্ল্যাটে ঢুকার আগে ঠিকাদার মোবারক তার গাড়িচালককে কিছুটা দুরে সড়কে গাড়িসহ অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে মোবারক সেখান থেকে না ফেরায় বিষয়টি তার গাড়িচালকের সন্দেহ হয়। এরপর তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় গিয়ে বিষয়টি অবহিত করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে কাউকে পায়নি।
পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও সদর মডেল থানার চাক্ষুষ একটি দল জানতে পারে যে, অপহরণকারীদের কয়েকজন মেড্ডা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভিকটিম মিন্টু দাসকে নিয়ে মুক্তিপণের টাকা নেওয়ার জন্য আসবে। তখন পুলিশ ভিকটিমের পরিবারের লোক সেজে অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকে। অপহরণকারীরা মুক্তিপণের টাকার জন্য শহরের পূর্ব মেড্ডা এলাকার দিগন্ত বাসস্ট্যান্ডের সামনে আসলে পুলিশ ইয়াম ও রবিনকে গ্রেফতার করে এবং অপহৃত ভিকটিম মিন্টু দাসকে উদ্ধার করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত দুজন জানায়, ভিকটিম গত রাতে ইয়ামদের বাসায় ছিল এবং ওই বাসায় আরও চার অপহরণকারী ছিল।
এদিকে, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ, সদর ও আশুগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে কসবা উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী বায়েক ইউনিয়নের মাদলা এলাকা থেকে গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ভিকটিম মোবারক হোসেনকে উদ্ধার করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, অপহরণের শিকার ঠিকাদার মোবারক হোসেন বাদী হয়ে আটক দুজনসহ ১৪ জনের নামে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলায় আসামিদের মধ্যে তিন জন নারী রয়েছেন বলেও জানান তিনি।