জেলা প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেড়েছে গর্ভবতী নারীদের নরমাল ডেলিভারি। আধুনিক এই যুগে জীবনমান উন্নত হওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসা ব্যবস্থাও ব্যাপক উন্নত হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নার্স ও দক্ষ চিকিৎসকের প্রচেষ্টায় অক্টোবর মাসে ১০৮ টি নরমাল ডেলিভারি হয়েছে।
সোমবার (১ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ওয়াহীদুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও গাইনী বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ফৌজিয়া আখতারের সঞ্চালনায় তিনজন সিনিয়র স্টাফ নার্সের হাতে শুভেচ্ছা গিফট প্রদান করা হয়।
প্রায় ২ বছর করোনাভাইরাসের মহামারিতে সরকার ঘোষিত লকডাউনের কারণে প্রতিমাসেই সরকারি হাসপাতালে প্রসূতি রোগী আসা তুলনামূলক অনেক কম ছিল। সেসময় নিরুপায় হয়ে বাড়িতে নরমাল ডেলিভারি করার চেষ্টা করা হয়েছে গর্ভবতীদের। যা অনেকটাই ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। করোনাকালীন পরবর্তী সময়ে চলতি বছরের এই অক্টোবর মাসে নরমাল ডেলিভারিতে জেলার সদর হাসপাতালটি সেঞ্চুরি করেছে। দক্ষ নার্স ও গাইনী চিকিৎসকদের কারনে দিন দিন জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুলো গর্ভবতী মহিলারা এখন সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে।
হাসপাতালের গাইনী বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. ফৌজিয়া আক্তার বলেন, করোনার মহামারির সময়ে প্রসূতি মায়েদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তারা পরিবহন জটিলতার কারনে সঠিক সময়ে সরকারি হাসপাতালে আসতে পারেনি যার কারনে বাড়িতে নরমাল ডেলিভারি হওয়ায় অনেক প্রসূতি মা ও নবজাতক মারাও গেছেন। করোনার পরবর্তীতে এখন আবার হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি বাড়ছে। দক্ষ নার্স ও গাইনী চিকিৎসকদের দায়িত্বশীলতা ও কর্তব্যপরায়ণতার কারনে দুইবছর পরে আবার হাসপাতালে গত অক্টোবর মাসে ১০৮ টি নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। যা ছিল নজিরবিহীন। গতমাসে ১০৮ টি নরমাল ডেলিভারির পাশাপাশি গাইনী চিকিৎসকরা ৮৭টি সিজার করেছেন।
তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে সিনিয়র স্টাফ নার্স স্মৃতি রানী রায় ৩০ টির অধিক নরমাল ডেলিভারি করেছে। তার পাশাপাশি নীহারা আক্তার খাতুন ও মর্জিনা বেগম তুলনামূলক ভাল নরমাল ডেলিভারি করেছে। অক্টোবর মাসে সর্বোচ্চ নরমাল ডেলিভারি করার জন্য ১১ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সের মধ্যে তিনজনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। প্রসূতি মায়েরা যদি হাসপাতালে সঠিক সময় আসেন তাহলে মা ও শিশুর মৃত্যুর হার কমে যাবে।
এই বিষয়ে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, সরকার প্রসূতিদের চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছে। এক্ষেত্রে চিকিৎসক ও নার্সদের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। আমাদের হাসপাতালে গাইনী বিভাগের নার্স ও চিকিৎসকরা যথেষ্ট ভাল করেছে।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে সিজারিয়ান ডেলিভারি ২০% নিচে নিয়ে আসতে হবে। প্রসূতি মায়ের চিন্তা করে, প্রতিদিন ২৪ ঘন্টায় নরমাল ডেলিভারি করাতে হবে। আগামী মাস থেকে নরমাল ডেলিভারি অব্যাহত থাকলে আবার দক্ষ নার্সদের পুরস্কৃত করা হবে৷
নরমাল ডেলিভারির জন্য রোগীদের কাউন্সেলিং করার বিষয়টি বেশি কাজ করেছে। হাসপাতালের ১১৫ নম্বর কক্ষে প্রসূতিদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। ওই কক্ষের মোবাইল নম্বর রোগীদের দিয়ে রাখা আছে। তাছাড়া প্রসূতিদের নম্বরও আমরা রাখছি। প্রসূতি রোগীদেরকে চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে আসার জন্য অনুরোধ করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, এনেস্থিসিয়া বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শাহিনাজ জাহান, হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. হিমেল খান, মেডিসিন বিভাগে জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মাজহারুল ইসলাম সোহেল, স্বাচিপ নেতা ও হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. ফাইজুর রহমান ফয়েজ, ডা. তৌহিদ আহমেদ, ডা. আইরিন হক, শারমিন হক স্বর্ণা ও ডা. শারমিন হক দিপ্তীসহ হাসপাতালের নার্সিং বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপসেবা তত্ত্বাবধায়ক গীতা রানী সাহা, নার্সিং সুপারভাইজার নার্গিস বেগম ও মমতাজ বেগম প্রমূখ।।