ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
মুসলমানদের জীবনে সব চেয়ে আনন্দের উৎসব হল ঈদ। বিশেষ করে ঈদ-উল আযহায় অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করে কোরবানির কারনে। যাদের সামর্থ্য আছে এমন মানুষ নিজের পছন্দ মতো কোরবানি দিয়ে থাকেন। কোরবানি ত্যাগের মাধ্যম হওয়ার কারণে মাংসের একটা অংশ গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া হয়। আর্থিক অভাব-অনটনের অনেকে বিলিয়ে দেওয়া মাংসের অতিরিক্ত ভাগ বিক্রি করে দেন।
অপরদিকে যারা কোরবানি দিতে পারেন না তারা কম দামে এই হাট থেকে মাংস কিনে নেন। ঈদের দিনে মাংস বিক্রি এবং কেনার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় জমজমাট মংসের বাজার বসে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ছিন্নমূল ও দরিদ্র লোকজন জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করে তা ওই সব বাজারে বিক্রি করে দেন। যারা কোরবানি দিতে পারেনি তারা এবং কিছু হোটেল ব্যবসায়ীরা এ মাংস কিনে নেন।
কোরবানি শেষে বিকেলের দিকে জেলা শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে চোখে পড়ে মাংসের হাট। শহরের অলিতে-গলিতে অস্থায়ী এসব বাজারে খুব কম দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে। মূলত সকাল থেকে ভিক্ষুক এবং গরিব-অসহায় মানুষেরা বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে যে মাংস সংগ্রহ করেছেন সেটাই তারা এসব স্থানে বিক্রি করছেন। করোনার কারণে গত বছরগুলোর তুলনায় এবার মাংস কম পেয়েছেন তারা। সেটিই অস্থায়ী বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এসব বাজার থেকে নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষদের এ মাংস কিনতে দেখা গেছে।
আজ ঈদের দিন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের পৌর মার্কেট, সড়কবাজার, আনন্দবাজার, মডের গোড়ি, মুক্তমঞ্চ মাঠ, ফুকিরাপুল ব্রিজ, কান্দিপাড়া মাদরাসা মোড়, টিএ-রোড, কাজীপাড়া মাঠে, শিমরাইল কান্দি রেলক্রসিং, পুনিয়াউট রেলক্রসিং, রেলস্টেশনের প্লাটফর্ম, কাউতলী বাসস্ট্যান্ড, টেংকেরপাড়, পৈরতলা বাসস্ট্যান্ড, বর্ডার-বাজার বাসস্ট্যান্ড, পীরবাড়ি বাসস্ট্যান্ড, মেড্ডা বাসস্ট্যান্ড ও অন্যান্য এলাকায় গোশতের ছোট ছোট হাট বসেছে। সংগ্রহ করা কোরবানির গোশত দরিদ্র লোকজন এখানে বিক্রি করছেন।
পৌর মার্কেটের গোশতের বাজারের নিজের সংগ্রহ করা মাংস বিক্রেতা সালাম বলেন, ঈদে বিভিন্ন বাসা থেকে প্রায় পাঁচ কেজি মাংস পেয়েছি। মাংস অনেক ভালো হওয়ায় এর সবটুকুই একজন হোটেল ব্যবসায়ী কিনে নিয়েছেন। দাম ৪০০ টাকা করে।
অনেক টাকা দেনা থাকায় এবার কোরবানি দিতে পারেননি ইদ্রিস মিয়া। দুপুরের পর থেকে ঘুরছেন হাটে মাংস কেনার জন্য।
তিনি বলেন, আজকে মাংস একটু সস্তায় পাওয়া গেলেও প্রচন্ড গরমে পলিথিনের ব্যাগে থাকায় অনেক মাংস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারপরও পরিবার নিয়ে থাকি শহরে তাই বাধ্য হয়ে এসেছি মাংস কিনতে।
টিএ-রোডে মাংস কিনতে গিয়ে এক হোটেল ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ সময়টাতে সস্তায় মাংস কেনা যায়। প্রতি কেজি ৩০০ টাকা বা তার চেয়ে কিছু বেশি দাম পড়ে। তাই গোশত কিনে রাখা হয় ব্যবসার জন্য। তবে এবার ভাল রেটে মাংস কিনতেছি। হোটের জন্য এত দাম দিয়ে মাংস কিনা সম্ভব না।
শিমরাইলকান্দি রেলক্রসিং এলাকার তৌফিক নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি গ্রাম থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসেছেন কোরবানির গোশত নিতে। বিভিন্ন বাসা বাড়ি থেকে প্রায় ২০ কেজি গোশত পেয়েছেন। তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাংস বিক্রি করে দিচ্ছেন।
মাংসের বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা যায়, কুরবানি দেওয়ার সামর্থ নেই, বেশি দাম দিয়ে মাংস কেনারও সামর্থ নেই এবং কারো বাড়ি থেকে গোশত চেয়ে নিতে সংকোচ বোধ করেন-এমন লোকজনই কম দামে মাংস কেনার জন্য এসব হাটে আসছেন।