মো. আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলামের কর্মী সমর্থকদের হামলা ও অগ্নিসংযোগে ঘটনায় প্রায় ৭২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
অধিকাংশ মালামাল লুটপাট ও আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে পৌরসভার সেবা৷ এই ঘটনায় পৌরসভার সচিব বাদি হয়ে অজ্ঞাতদের আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন।
সরেজমিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় প্রথম তলা থেকে দ্বিতীয় তলা অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নিচের গ্যারেজেও আগুনে পুড়ে মালামাল ছাই হয়েছে। পুরো পৌরসভা ভবন জুড়ে পুড়া গন্ধ। গ্যারেজে রাখা তিনটি গাড়ি পুড়েছে। এই ঘটনায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পৌরসভায় রক্ষিত পৌরবাসীর বিভিন্ন নথি। পৌরবাসীর ১৫০ বছরের রেকর্ডপত্র পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে।
পৌরসভার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হেফাজত কর্মী-সমর্থদের ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে পৌরসভা কার্যালয়ের ২০টি স্টিলের আলমিরা, ২৫টি কাঠের আলমিরা, ১৮টি কম্পিউটার, ৫টি ল্যাপটপ, ৪টি ফটোকপিয়ার মেশিন, ৩৪টি টেবিল, ৭টি সেক্রেটারিয়েট টেবিল, ১১৫টি চেয়ার, ৫টি এসি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এছাড়াও স্বাস্থ্য শাখার ১২টি ডিপ ফ্রিজ, ৪টি সাধারন ফ্রিজ, ভ্যাকসিন, সিলিং ফ্যান, স্টোরে রক্ষিত ১০ হাজার এলইডি বাতি, ৩ হাজার বাতি সেড, ৫০ কয়েল বৈদ্যুতিক তার, ১৬টি গাড়ি, ৩টি রোড রোলার, ১টি মশক নিধন গাড়িসহ আরও অনেক জিনিসপত্র ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট করা হয়েছে।
পৌরসভার সংরক্ষণ শাখার মালামাল, স্টেশনারী মালামাল, বাড়ির প্ল্যান অনুমোদনের পে-অর্ডারসহ নথি, চেক রেজিস্টার, ইস্যু রেজিস্টার, ক্যাশ বই, অ্যাসেট রেজিস্টার, সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাক্তিগত নথি ও সার্ভিস বই, সকল রেজিস্টার, ঠিকাদারদের বিল-জামানতের নথিসহ বিভিন্ন মালামাল আগুনে পুড়ে গেছে। পৌরসভার মালিকানাধীন উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনটিও আগুনে পুড়িয়ে দেয় হেফাজতের কর্মী-সমর্থকরা। এতে মিলনায়তনের ৫শ চেয়ার, ২০ সেট সোফা, ২০টি ৫ টনের এসি, ১০টি ২টনের এসি এবং ১৫০টি সিলিং ফ্যান আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এদিকে, পৌরসভা কার্যালয় হামলার শিকার হওয়ায় শহরে বিভিন্ন সড়কের মোড়ে বাড়ি ঘরের ময়লা আবর্জনার স্তুপ জমা হয়েছে। গত কয়েকদিনে এসব বর্জ্য সরাতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। ফলে মারাত্মক দূর্গন্ধে চরম দূর্ভোগে পড়েছে পৌরসভার বাসিন্দারা।
এই প্রতিকূল অবস্থায় পৌরবাসীর দূর্ভোগের কথা চিন্তা করে গত শনিবার (০৩ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলন করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর কর্তৃপক্ষ। দুপুরে পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবিরের পাইকপাড়ার বাস ভবণে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মেয়রের এই বাস ভবনও হেফাজতের হামলার শিকার হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির তার লিখিত বক্তব্যে বলেন,গানপাউডার ও পেট্রোল দিয়ে পৌরসভা কার্যালয় ও পৌরমিলনায়তনের সবকিছু জ্বালিয়ে দিয়েছে। পাশের সুইপার কলোনিতে গিয়ে আত্মরক্ষা করে পৌরসভার কর্ম
রবিবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র মিসেস নায়ার কবীর সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধীতা করে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা।
মেয়র নায়ার কবির বলেন, হেফাজত ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের সাথে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা এবং বিগত পৌরসভা নির্বাচনে পরাজিত দুই প্রার্থীর সমর্থকরা পৌরসভা ভবন ও পৌরমিলানায়তনে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় ভীতস্বন্ত্রস্ত পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাশ্ববর্তী সুইপার কলোনিতে পালিয়ে জীবন রক্ষা করে।
তিনি আরও বলেন, হামলাকারীরা আমার বাসভবনেও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। বাসার নিচের একটি দোকানের মালামাল লুটপাট করে। হামলার কারণে পৌরসভার সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। হামলায় পৌরসভার ট্রাকে ময়লা অপসারণের মেশিনটিও ধ্বংস করে ফেলে। ফলে ময়লা অপসারণ করা যাচ্ছে না। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
শনিবার ওই সংবাদ সম্মেলনের সময় মেয়রের সাথে পৌরসভার কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।