ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা শহরে এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে মাটি কেটে পুকুরের পাড় ভরাটের অভিযোগ উঠেছে। পৌর কাউন্সিলরসহ স্থানীয় লোকজন পুকুর ভরাট বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
দক্ষিণ পৈরতলা এলাকার আনোয়ারুল হক ও তাঁর স্বজন ৬নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর ওমর ফারুক ওরফে জীবনসহ স্থানীয় ১৮জন গত ৬ এপ্রিল পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে একই গ্রামের মুজিব মিয়াসহ তাঁর আরো আট ভাই ওই পুকুরের পাড় ভরাট করছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ পৈরতলা এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারুল হক, কাউন্সিলর ওমর ফারুকসহ স্থানীয় প্রায় ২০জন সম্মিলিতভাবে ওই পুকুরের মালিক। তাঁরা দীর্ঘ বছর ধরেই পুকুরে মাছ চাষসহ ওজু-গোসল ও পুকুরের পানি ব্যবহার করে আসছে। পুকুরটি তাঁদের ভোগ দখলে রয়েছে। শত বছর পুরনো এই পুকুরের চার পাড়ের লোকজন আলো বাতাসের সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় পানি ব্যবহারের সুবিধা ভোগ করে আসছে। কিন্তু গ্রামের প্রভাবশালী মুজিব মিয়াসহ তাঁর আরো আট ভাই ওই পুকুরের পাড় ভরাট করছেন শক্তির দাপটে অবৈধভাবে গত ১ এপ্রিল থেকে মাটি কেটে পুকুর ভরাট শুরু করেছেন। পুকুরে ভরাট করতে নিষেধ করলেও তারা কাউকে তোয়াক্কা করছেন না। বরং উল্টো প্রাণনাশের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। পুকুর ভরাট করলে গ্রামের পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়বে। তখন চারপাশে বসবাসকারী সাধারণ লোকজন মাছ চাষ, ওজু-গোসলের অসুবিধাসহ আলো বাতাস ও পানি ব্যবহারের ক্ষয়-ক্ষতির আশংকা রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ৮ উপধারা মোতাবেক তাদের স্বাভাবিক জীবন চলাচলের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় পুকুর ভরাট বন্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
ওই পাড় সংলগ্ন বাসিন্দা ইদন মিয়া (৭০) বলেন, ছোট বেলা থেকেই এই পুকুরে গোসল করে আসছি। পরিবারের মহিলারা গৃহস্থালীর সকল কাজকর্ম এখানে করে আসছে। ভরাট করা জায়গায় গোসল করার জন্য একটি ঘাটলা ছিল।
আব্দুল আওয়াল ও সিরাজুল হক নামে গ্রামের আরো দুই বাসিন্দা বলেন, গ্রামের সবাই গোসল ও খাবারের পানির জন্য এই পুকুর ব্যবহার করে। মাজারে অনেক মানুষ আসে। তারা এখানে ওজু করে। এটি শত বছর পুরনো পুকুর। পুকুরের পাড় ভরাট করা হলে এই অংশের মানুষ পুকুরের পানি আর ব্যবহার করতে পারবে না। তারা বলেন, আমরা যতদূর জানি পুকুর, ডোবা বা জলাশয় ভরাট করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। ব্যক্তি মালিকানা হলেও পুকুর ভরাট করা যায় না। মুজিব মিয়া পুকুর ভরাটের জন্য দেয়ালের ভিতরেও মাটি ফেলছে সে কারও কথা শুনছে না। এটা সত্যি এলাকাবাসীর জন্য দুঃখজনক।
এদিকে অভিযুক্ত মুজিব মিয়া বলেন, আমার চাচা ইকবাল হোসেন ও আমি দুই শতক করে চার শতক জায়গা কিনেছি। এটা ১৯৫৬ সাল থেকেই নাল জায়গা। তিন পুরুষের ভায়া দলিল আছে। এর দলিলাদিও আমার কাছে আছে। যদি এটা পুকুরের জায়গা প্রমাণ করতে পারে তাহলে আমি পুকুর ভরাট করা বন্ধ করে দিব।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার কাউন্সিলর জীবন মিয়া বলেন, এলাকায় এটি শতবছর পুরনো পুকুর। এলাকাবাসী এই পুকুর গোসলসহ গৃহস্থালীর সকল কাজ করে থাকেন। এর পাড় ভরাট করা হলে সাধারণ মানুষ এই সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত হবেন। তাছাড়া পুকুর ভরাট করার আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু ওই ব্যক্তিকে পুকুর ভরাট করতে নিষেধ করলে তিনি তা পাত্তা দিচ্ছেন না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নূরুল আমিন বলেন, আমাদের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে পুকুর ভরাট করেছেন। আর আগামী সোমবার পুকুরের মালিক ও যিনি পুকুর ভরাট করছেন, উভয়পক্ষকে ডাকা হয়েছে।