Thursday , 21 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
বুমেরাং

বুমেরাং

অনলাইন ডেস্কঃ

এই পৃথিবীতে যারা সভ্য জাতি বলে পরিচিত তাদের সভ্যতার মোটামুটি পরিচয় হচ্ছে এই যে, তারা চাষবাস করতে জানে, আগুনের এবং নানারকম ধাতুর ব্যবহার জানে, নানাকম জিনিসকে নিজের কাজে লাগাতে জানে, পাকা ঘর দালান গড়তে জানে, আর মনটাকে নানারকম জ্ঞানের সন্ধানে নিযুক্ত করতে জানে। এ-সব যারা জানে না তাদের আমরা বলি অসভ্য জাত। এই হিসাবে, পৃথিবীর সবচাইতে অসভ্য জাতিদের নাম করতে হলে অষ্ট্রেলিয়ার আদিম বর্বর জাতির কথা উল্লেখ করতে হয়। তারা কাপড় বানাতে জানে না, ধাতুর ব্যবহার তো দূরের কথা, সামান্য মেটে বাসন পর্যন্ত তৈরি করতে জানে না, চাষবাসের কোনো খবরই রাখে না; কাঁচা মাংস আর বুনো গাছের ফল বা শিকড় খেয়ে ঘুরে বেড়ায়।

এমন যে অসভ্য জাত, তারাও কিন্তু একটি বিদ্যায় এমন ওস্তাদ যে, সে বিদ্যা পৃথিবীর অতিবড়ো সভ্য জাতিরাও আজ পর্যন্ত শিখে উঠতে পারে নি। সে বিদ্যাটি হচ্ছে বুমেরাং অস্ত্রের ব্যবহার।

ভালো করে দেখলে দেখা যায়, সেটাও কেমন একটু ঢেউ খেলানো মতন, কোথাও সামান্য উঁচু কোথাও সামান্য নিচু। বুমেরাঙের চেহারা নানারকম হয়।এখন বুমেরাঙের ব্যবহারের কথা বলি। এই অস্ত্রের সাহায্যে সে-দেশী লোকেরা তাদের প্রতিদিনের শিকার সংগ্রহ করে। লড়াইয়ের সময়েও এই অস্ত্রই তাদের প্রধান সম্বল।

যুদ্ধের জন্য, শিকারের জন্য বা তামাশার জন্য ভিন্ন ভিন্ন রকমের বুমেরাং তৈরি হয়। যুদ্ধে যে-সব অস্ত্রের ব্যবহার হয় সেগুলি ছুঁড়ে মারলে আর ফিরে আসে না। শিকারের বুমেরাংগুলি এমনভাবে তৈরি যে দৈবাৎ যদি শিকার ফস্‌কে যায় তা হলে অস্ত্র আপনি শিকারীর কাছে ফিরে আসে। তামাশার বুমেরাংগুলি এমনভাবে বানায় যে ছুঁড়লে পর খুব সুন্দর বা খুব অদ্ভুতভাবে নানারকম কায়দা খেলিয়ে অস্ত্র আপনার ও ওস্তাদের বাহাদুরী দেখায়।

আশ্চর্য এই যে, এই-সব অস্ত্র কেন যে ঐরকমভাবে চলে, তার সঠিক হিসাব আর নিয়মকানুন বার করতে গিয়ে মহা মহা পণ্ডিতেরাও অনেক সময় হার মেনে যান; অথচ পৃথিবীর অসভ্যতম জাতির কারিকরেরা সারা বছর ধরে এই-সব অস্ত্র নিখুঁতভাবে গণ্ডায় গণ্ডায় তৈরি করছে আর অসভ্য ওস্তাদেরা তার অব্যর্থ ব্যবহার দেখিয়ে সভ্য মানুষকে তাক্ লাগিয়ে দিচ্ছে। কেমন করে তাদের মগজে এমন বিদ্যা প্রবেশ করল, কোথা থেকে এমন অস্ত্রের সন্ধান পেয়ে এমন করে শিখল, তার উত্তর কেউ জানে না।

লেখক: সুকুমার রায়

বিশেষ দ্রষ্টব্য: লেখেকের মূল বানানরীতি অক্ষূণ্ণ রাখা হয়েছে।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply