অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক আবিষ্কৃত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ‘ব্যানকোভিড’কে তালিকাভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্বের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্লোবের আবিষ্কৃত তিনটি ভ্যাকসিনের নাম এই তালিকায় রয়েছে। এটাই সর্বোচ্চ। গ্লোব বায়োটেকের নিজস্ব প্রদ্ধতিতে উদ্ভাবিত ব্যানকোভিড ভ্যাকসিনটি ‘ডি৬১৪জি ভ্যারিয়েন্টের’ বিরুদ্ধে বিশ্বের প্রথম এবং একমাত্র আবিষ্কৃত টিকা। ‘ডি৬১৪জি ভ্যারিয়েন্টই সারা বিশ্বে সর্বাধিক করোনা সংক্রমণের জন্য দায়ী বলে চিহ্নিত হয়েছে। শনিবার সংস্থার ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যৌথভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশীদ ও সিইও ড. কাকন নাগ।
এতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৫ অক্টোবর গ্লোব বায়োটেকের আবিষ্কৃত তিনটি ভ্যাকসিনকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।’ ভ্যাকসিনগুলো হচ্ছে- ডি ৬১৪জি ভিএআরআইইএনটি এমআরএনএ ভ্যাকসিন, ডিএনএ প্লাসমিড ভ্যাকসিন এবং অ্যাডিনোভাইরাস টাইপ-৫ ভেক্টর ভ্যাকসিন। তারা বলেন, গ্লোব বায়োটেকই বিশ্বের একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যাদের সর্বোচ্চ তিনটি ভ্যাকসিনের নাম এই তালিকায় রয়েছে।
গ্লোব বায়োটেকের রিসার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের প্রধান ডা. আসিফ মাহমুদ গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ডিসেম্বরের বাংলাদেশের বাজারে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে আসার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন। তার এই আশাবাদ প্রকাশের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রি-ক্লিনিক্যাল টেস্টের তালিকাভুক্ত করল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তালিকায় ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজের ভ্যাকসিনসহ ১৫৬টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
গ্লোব বায়োটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. কাকন নাগ জানান, বর্তমানে সারা বিশ্বে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এই সংক্রমণে ডি৬১৪জি ভ্যারিয়েন্টটি শতভাগ দায়ী বলে সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদও (বিসিএসআইআর) বাংলাদেশে সংক্রমণের জন্য ডি৬১৪জি ভ্যারিয়েন্টকে দায়ী বলে নিশ্চিত করেছে। গ্লোব বায়োটেকের নিজস্ব প্রদ্ধতিতে উদ্ভাবিত ব্যানকোভিড ভ্যাকসিনটি ডি৬১৪জি ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে বিশ্বের প্রথম এবং একমাত্র আবিষ্কৃত টিকা। প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যা সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, যার বিস্তারিত ফলাফল বায়ো-আর্কাইভে প্রি-প্রিন্ট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। মাত্র ৬ সপ্তাহে বায়ো আর্কাইভে ৫ হাজার ৮৫টি গবেষণাপত্র জমা পড়েছে। যার মধ্যে ৬৯তম গবেষণা হিসেবে গ্লোব বায়োটেকের ভ্যাকসিন সংক্রান্ত গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। ড. কাকন বলেন, বর্তমান বিশ্বে ৬৬টি ভ্যাকসিন ডেভেলপ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৪টি ভ্যাকসিন ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে। গ্লোব বায়োটেক mRNA প্রযুক্ত ব্যবহার করে mRNA-LNP-তে রূপান্তরিত করে ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। অ্যানিমেল ট্রায়ালে প্রমাণ হয়েছে এই ভ্যাকসিন শরীরে কোনো বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে না। এমনকি রক্তেও কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। গ্লোব আবিষ্কৃত ‘ব্যানকোভিড’ যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনের সমপর্যায়ের বলে দাবি করে তিনি বলেন, এটি প্রয়োগে স্বল্প সময়ে প্রাণীদেহে অ্যান্টিবডি তৈরির প্রমাণ মিলেছে।
ড. কাকন বলেন, বর্তমানে বিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে একটি শক্তিশালী কার্যকর ভ্যাকসিন প্রয়োজন। বিশ্বকে করোনামুক্ত করতে হলে প্রায় ৭ বিলিয়ন ভ্যাকসিন প্রয়োজন। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা মাত্র দেড় বিলিয়ন। যদিও এই উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ বাড়িয়ে ইতোমধ্যে ৩ বিলিয়ন করা হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আমাদের দেশ ভ্যাকসিনের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাত্র ৩ শতাংশ ভ্যাকসিনের নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। অথচ দেশের কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। এক্ষেত্রে গ্লোবকে সুযোগ দেয়া হলে সবার আগে আমাদের দেশের মানুষের ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্বজুড়ে গবেষকরা একটি ভ্যাকসিন তৈরির লক্ষ্যে ছুটছেন। এর মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৪০টির বেশি ভ্যাকসিনের ওপর নজর রাখছে। ভ্যাকসিন তৈরি ও পরীক্ষা করতে সাধারণত বেশ কয়েক বছর সময় লাগে। বেশ কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে তবেই ভ্যাকসিন ব্যবহারের উপযোগী হয়। তবে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থা বিবেচনা করে গবেষকরা ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যেই তা সম্পন্ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এর আগে ১৪ অক্টোবর গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের আবিষ্কৃত কোভিড-১৯ এর টিকা ‘বিএনকোভিড’ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র আইসিডিডিআর’বি-এর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ড. আসিফ মাহমুদ বলেন, গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের আবিষ্কৃত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বিএনকোভিডের প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অ্যানিমেল মডেলে সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। এখন হিউম্যান মডেলে টিকার সুরক্ষা ও কার্যকারিতা পরীক্ষায় একটি পূর্ণাঙ্গ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পস্তুতি নিচ্ছি। এই ট্রায়াল পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃত একটি স্বনামধন্য কন্ট্রাক্ট রিসার্স অর্গানাইজেশন (সিআরও) আইসিডিডিআর’বির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে। এখন থেকে আমাদের হয়ে আইসিডিআরবি কাজ করবে।